মালয়েশিয়া সরকার আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে পামবাগানের প্লান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যা প্রবাসী কর্মীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়ন বন্ধ করবে।
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) কে পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় পামবাগানে কর্মী নিয়োগের জন্য বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশের শেষ তারিখ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, কারণ এর ফলে অনেকেই তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাতে পারেন।
মালয়েশিয়ায় চলতি বছর থেকে প্লান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছিল। তবে, এবার সরকারের নতুন নির্দেশনার ফলে চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গাজী মো. শাহেদ আনোয়ারের স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়েছে যে, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য এখন থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় ৭৮,৯৯০ টাকার অতিরিক্ত কিছু নিতে পারবে না।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য নির্ধারিত নতুন নির্দেশনাগুলি অনুসরণ করা অপরিহার্য। সমস্ত লেনদেন লিখিত দলিল এবং ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এর পাশাপাশি, অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্ট ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীদের লেনদেন না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা, বিএমইটির ছাড়পত্র, বিমান টিকেট এবং প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশনসহ সব প্রস্তুতি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
মালয়েশিয়া একটি শ্রমঘন দেশ, যেখানে বিদেশী কর্মী নিয়োগের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। বিশেষ করে পামবাগান সেক্টরে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে, বর্তমান নির্দেশনার ফলে নতুন কর্মী নিয়োগের সুযোগ সীমিত হবে এবং ইতোমধ্যে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
যেহেতু মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশের সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত, তাই যারা এ দেশে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এই সময়সীমার মধ্যে তাদের সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় পামবাগানে কর্মী নিয়োগ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে যারা বিদেশে কর্মসংস্থান করতে চান, তাদের জন্য আরও বেশি সচেতনতা এবং প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। মালয়েশিয়া সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের ফলে দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থান এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা দেখতে হবে।
এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং তাদের জীবনযাত্রার উপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নতুন নিয়মগুলি অনুসরণ করে, বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এবং কর্মীরা যেন সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে, সেটাই এখন সময়ের দাবি।