টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে কৃষকদের অপহরণের ঘটনা: পরিবারগুলোকে মুক্তিপণের দাবিতে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় অপহৃত ৯ কৃষক মুক্তিপণের পর সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে তাদের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজর করাচি পাড়ার এই কৃষকদের অপহরণ করার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মুক্তিপণের টাকা গোপনে পরিশোধের পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজর করাচি পাড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে ৯ কৃষককে অপহরণ করে একদল দুর্বৃত্ত। অপহরণকারীরা পরে কৃষকদের পরিবারের কাছে ফোন করে প্রতি জনের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এই ঘটনার পর স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ আনোয়ারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অপহৃত কৃষকদের মুক্তির জন্য গোপনে মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়েছে, তবে কত টাকা এবং কাকে দেওয়া হয়েছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কৃষকদের স্বজনরা। এদিকে, অপহৃত কৃষকরা মুক্তিপণের কারণে আসলেই মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
মুক্তিপ্রাপ্ত কৃষকদের মধ্যে রয়েছেন:
- নুরুল ইসলামের ছেলে আনোয়ার
- বাঁচা মিয়ার ছেলে গিয়াস উদ্দিন
- জালাল আহমদের ছেলে বেলাল উদ্দিন
- আবুল হোছনের ছেলে আবু বকর
- নুরুল আলমের ছেলে মুহাম্মদ আলম
- আজিজুর রহমানের ছেলে কফিল
- নুরুল হোছন
অন্য দুজনের নাম-ঠিকানা এখনো জানা যায়নি। তাদের মুক্তির পর স্থানীয়রা এবং পরিবারের সদস্যরা আনন্দিত হলেও এই ঘটনার প্রভাব তাদের মনে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. গিয়াস উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, অপহরণের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পুলিশ দুদিন ধরে পাহাড়ে সক্রিয় অভিযান চালিয়েছে, যার ফলে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা চাপের মুখে পড়ে কৃষকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি জানান, পুলিশ মুক্তিপণের বিষয়ে অবগত নয়, তবে কৃষকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করতে কাজ করছে।
এই ঘটনার পর থেকে এলাকার জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন, কৃষকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন আরো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, এবং তারা চান যে, ভবিষ্যতে যেন এমন অপহরণের ঘটনা না ঘটে। স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে যে, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, কৃষকদের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে। এলাকাটি পাহাড়ি এবং অপহরণকারীদের জন্য সহজলভ্য। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনে করেন, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে এবং কৃষকদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা আশা প্রকাশ করছেন যে, সরকার এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে এবং কৃষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এ ধরনের অপহরণের ঘটনা সাধারণত অর্থনৈতিক চাপের কারণে ঘটে থাকে। বিশেষ করে দরিদ্র কৃষক পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। অপহরণকারীরা নিজেদের সুবিধা নিতে সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে। এটি সমাজের একটি অন্ধকার দিক, যা আমাদের সবাইকে চিন্তিত করে।
কক্সবাজারের টেকনাফে কৃষকদের অপহরণের ঘটনা আমাদের সমাজে নিরাপত্তার অভাব এবং দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরেছে। কৃষকদের মুক্তি পাওয়ার পরও তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। আশা করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে তা নিশ্চিত করবে।
সবার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে কৃষকরা তাদের কাজ করতে পারবেন নির্বিঘ্নে। এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ এবং প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া আগামীতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।