বাসের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের যাত্রীদের মধ্যে সংঘর্ষ, শোকের ছায়া এলাকাজুড়ে
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মামা-ভাগনে। সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে কাশিয়ানী উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফুকরা নামক স্থানে ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন যুবক ও তার শিশু ভাগ্নে রয়েছেন। এই ঘটনায় একই পরিবারের আরও ছয়জন আহত হয়েছেন, যারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহতদের মধ্যে একজন হচ্ছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া মোল্লাবাড়ি গ্রামের আহম্মদ খানের ছেলে দ্বীন ইসলাম খান (২৫)। তার ভাগনে, খুলনার তেরখাদা এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মোল্লার ছেলে হোসাইন (১০)। হোসাইন করপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। এই ঘটনায় এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে এক আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসা রাজিব পরিবহনের একটি বাস ফুকরা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ব্যাটারিচালিত একটি যাত্রীবাহী ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ইজিবাইকটি মারাত্মকভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যায়, ফলে এর যাত্রীরা গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলেই মারা যান, বাকিরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসকরা দ্বীন ইসলাম ও হোসাইনকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যান্য আহতদের চিকিৎসার প্রক্রিয়া চলছে, এবং তাদের অবস্থার উপর নজর রাখা হচ্ছে।
কাশিয়ানী হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. আবুল হোসেন মজুমদার জানান, দুর্ঘটনাকবলিত ইজিবাইকটিতে মোট আটজন যাত্রী ছিলেন, যারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। তিনি বলেন, “বাস ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হবে।”
এই দুর্ঘটনা আবারও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে কারণ সঠিক নিয়ম ও বিধি অনুসরণ না করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আরো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়দের মধ্যে গভীর শোক এবং ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে সড়কে যানবাহনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যে, সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
হোসাইনের মৃত্যুর ফলে করপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, তারা শোকগ্রস্ত এবং এই ঘটনায় শিশুদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সমর্থন দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করছে।
এই দুর্ঘটনার প্রভাব কেবল নিহতদের পরিবারের উপরেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সড়কে যানবাহনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা পদক্ষেপ নেবেন এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আরো সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সড়ক নিরাপত্তা একটি জরুরি বিষয়। সড়ক ব্যবহারকারী সকলের দায়িত্ব হলো আইন মানা এবং সড়ক নিরাপত্তার নিয়মকানুনগুলো অনুসরণ করা। নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আশা করছি, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।