বাংলাদেশে মেট্রোরেল যুগের সূচনা হয়েছে এবং রাজধানী ঢাকায় প্রথমবারের মতো পাতাল মেট্রোরেলের কাজ চলছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান এমআরটি লাইন-৬ এর সাফল্যের পর, নতুন নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন এমআরটি লাইন-১, দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই প্রকল্পটি ঢাকা শহরের যানজট মোকাবেলাসহ পরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে রাজধানী ঢাকার নাগরিকরা দ্রুত ও নিরাপদে যাতায়াতের সুযোগ পাবে। যদিও প্রকল্পের শুরুতে যথাযথ প্রস্তুতির অভাব রয়েছে, কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছে যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের আওতায় মোট ১২টি ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণ হবে, যার মধ্যে প্রথম ধাপ হিসেবে প্যাকেজ সিপি-১ এর পাইলিং কাজ ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমানে, ডিপোর জন্য নির্ধারিত জমিতে নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। পাইলিংয়ের কাজ চলছে, যা এই প্রকল্পের প্রথম ধাপ। জমির উন্নয়ন সম্পন্ন হলে দ্বিতীয় ধাপে ডিপোর ভবন নির্মাণ হবে। একাধিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে, যা প্রকল্পের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বাকি ১১টি প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচিত ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে তারা আগামী বছর মার্চে কাজ শুরু করতে পারে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পের কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।
পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সময়সূচি বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই মাটির নিচের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা প্রায় ছয় মাস পিছিয়েছে। এই দেরিতে কাজের সময়সূচি প্রকল্পের সম্পন্নতার ওপর প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, এতে লাইন-১-এর কাজ শেষ করতে কোনো সমস্যা হবে না।
পাতাল মেট্রোরেলের সুফল গ্রহণ করতে রাজধানী বাসীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। যানজট নিরসন, সময় সাশ্রয়, এবং স্বল্প খরচে যাতায়াতের মাধ্যমে নগর জীবনের মান উন্নয়ন হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। মেট্রোরেল চালু হলে, ঢাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে এবং পরিবহন ব্যবস্থার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্পটি দেশের পরিবহন খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যদিও নির্মাণকাজের প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবুও কর্তৃপক্ষ দৃঢ় প্রত্যয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যদি সময়মতো পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হয়, তাহলে ২০২৬ সালে রাজধানী ঢাকায় মাটির নিচে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করতে সক্ষম হবে। এভাবে, দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে, যা দেশের অর্থনীতি এবং নগর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।