ঢাকা: র্যাবের বিশেষ অভিযানে রাজধানীর পূর্ব বাসাবো এলাকা থেকে টেকনাফের আলোচিত মাদক কারবারি ও সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে র্যাব-১৫ ও র্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক চোরাকারবারি এবং টেকনাফের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বদির অন্যতম সহযোগী ছিলেন জাফর। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক, অস্ত্র ও দুর্নীতির মামলা। তবে, বেশ কিছু মামলায় জামিনে থাকলেও তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন রয়েছে আরও মামলা।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর টেকনাফে ছাত্র আন্দোলন ও জনসাধারণের বিক্ষোভ চলাকালে আলোচিত ঝর্না চত্বর এলাকায় জাফর আহম্মদের নেতৃত্বে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এসময় ছাত্র ও জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের হাতে দেখা যায় দুটি শর্টগান ও একটি পিস্তল। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে। ওই ঘটনার পর ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে জাফরের নাম উঠে আসে। প্রধান আসামি বদি ইতোমধ্যেই র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন।
টেকনাফে জাফর আহম্মদ ও তার তিন ছেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আলো শপিং কমপ্লেক্স, হোটেল নাফ কুইন এবং আব্দুল্লাহ ব্রাদার্স ফিলিং স্টেশনসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাদের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনায় জাফরকে প্রধান আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এসব ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
জাফর আহম্মদ টেকনাফের মাদক চোরাকারবারির অন্যতম ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় মাদক কারবারিদের মধ্যে তার নাম রয়েছে। জানা যায়, টেকনাফ ও কক্সবাজার অঞ্চলে তার মাদক সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়েছে।
জাফরের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অস্ত্র মামলা। স্থানীয় জনগণের কাছে জাফর ও তার সহযোগীদের অস্ত্র প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে। এতে টেকনাফের জনজীবন অশান্ত ও ভীতিকর অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি, তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাধিক মামলা। বিভিন্ন সময়ে তার বিপুল সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং দুদক তদন্ত করেছে। যদিও কিছু মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন, তবুও বেশিরভাগ মামলার বিচার চলছে।
র্যাব-১৫ ও র্যাব-৩ এর বিশেষ অভিযানে রাজধানীর বাসাবো এলাকায় তাকে আটক করা হয়। র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, টেকনাফে মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে এই অভিযান চালানো হয়েছে। জাফরের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে টেকনাফে চলমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক কারবারে বিরতি আসবে বলে র্যাব আশা প্রকাশ করেছে।
টেকনাফের শীর্ষ মাদক কারবারি ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী জাফর আহম্মদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশের মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযানে বড় সাফল্য এসেছে। এ ঘটনায় টেকনাফ ও আশেপাশের এলাকায় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে।