বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম ড. খালিদ হোসেন ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এবছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী হজ পালন করতে পারবেন। হজযাত্রীদের খরচ কমানো ও ভ্রমণের সুবিধার জন্য সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো দুটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৫ সালে হজের এ প্যাকেজগুলোর মাধ্যমে যাত্রীরা পূর্বের তুলনায় কম খরচে হজ পালনের সুযোগ পাবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হজের জন্য এবছর দুটি আলাদা প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে। প্রথম প্যাকেজ, সাধারণ হজ প্যাকেজ ১ এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। এটি গত বছরের তুলনায় এক লাখ ৫৯৮ টাকা কম। সাধারণ হজ প্যাকেজ ২ এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। সাধারণত, হজের খরচ প্রতিবছরই বৃদ্ধি পায়। তবে এবছর সরকার এই খরচ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করেছে, যা হজযাত্রীদের জন্য স্বস্তির খবর।
নতুন প্যাকেজগুলোর একটি নির্ধারিত হয়েছে মক্কার পবিত্র কাবা শরিফের এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে থাকা যাত্রীদের জন্য, অন্যটি কাবা শরিফের আড়াই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে থাকা যাত্রীদের জন্য। এই দূরত্বের ভিত্তিতে ভিন্ন মূল্যে দুটি প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। হজের সময় মক্কার পবিত্র স্থানগুলোর কাছাকাছি অবস্থান করা যাত্রীদের জন্য এই সুবিধা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হজের সময় যাতায়াতের সুবিধা ও সময় বাঁচানোর জন্য কাছাকাছি থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
২০২৫ সালে সরকারিভাবে কোনো বিশেষ হজ প্যাকেজ রাখা হয়নি। গতবার বিশেষ হজ প্যাকেজের জন্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যাদের কাছে হজের সময় বিলাসবহুল ব্যবস্থা প্রয়োজন তারা বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করতে পারেন। বিশেষ প্যাকেজটি না থাকায় অনেকেই সাধারণ প্যাকেজগুলোর মধ্যে থেকেই নিজেদের সুবিধামতো একটি প্যাকেজ বেছে নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছর, ২০২৪ সালে সরকারিভাবে হজের খরচ ছিল ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা, যা এবছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও, গতবার বিশেষ প্যাকেজের চাহিদা থাকলেও এবার তা বাদ দেয়া হয়েছে। সরকার খরচ কমানোর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় হজযাত্রীরা কিছুটা আর্থিক সাশ্রয় করতে পারবেন।
এই নতুন প্যাকেজ ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ধর্মসচিব মু. আবদুল হামিদ জমাদ্দার, হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলামসহ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন হজযাত্রীরা। তারা মনে করছেন, হজযাত্রায় বিশেষ ব্যবস্থাপনা ও কম খরচের প্যাকেজ দিয়ে সরকার তাদের আর্থিক সুবিধা প্রদান করছে।
হজযাত্রীদের জন্য সরকার কিছু নির্দেশনাও জারি করেছে। হজযাত্রীদের সময়মতো নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে এবং হজ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। নিবন্ধনের সময় যাত্রীরা প্যাকেজ পছন্দ করতে পারবেন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপকে অনেকেই প্রশংসা করছেন। খরচ কমানোয় হজযাত্রীরা এবার সুবিধাজনক প্যাকেজের মধ্যেই তাদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পছন্দ করতে পারবেন। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম ড. খালিদ হোসেন এই প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য একটি নতুন সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এবছর অধিক সংখ্যক মানুষ কম খরচে হজ পালন করতে সক্ষম হবেন।
২০২৫ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণা দিয়ে সরকার দেখিয়েছে, হজযাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।