বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। এই সিদ্ধান্তটি মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পূর্বে, সকালে সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত সার্চ কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করেছেন এবং আজ অথবা কালকের মধ্যেই এটি জারি হবে।”
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আরও জানান, সার্চ কমিটি গঠনের পর নির্বাচনী কমিশন গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা ভুয়া নির্বাচন করব না। আমাদের লক্ষ্য হলো অসাধারণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা।”
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি ছয় সদস্যের, যার নেতৃত্বে রয়েছেন আপিল বিভাগের একজন বিচারক। কমিটি আইনে বর্ণিত যোগ্যতা ও অযোগ্যতা বিবেচনা করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এরপর রাষ্ট্রপতি ওই ১০ জনের মধ্যে থেকে পাঁচজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনয়ন করবেন।
নির্বাচন কমিশন একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বাধীনতা, সুষ্ঠুতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুসংহত হয়। নতুন কমিশনের কার্যক্রম নির্বাচনের পদ্ধতি এবং ভোটারদের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আসন্ন চ্যালেঞ্জ
নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক চাপ, ভোটারদের আস্থা অর্জন এবং নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কমিশনকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে যাতে নির্বাচনের সময়ে তারা জনসাধারণের বিশ্বাস অর্জন করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত সার্চ কমিটি নতুন কমিশনের জন্য প্রস্তাবিত সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবে, তা সকলের জন্য আশাব্যঞ্জক। নতুন নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ এনে দিতে পারে।