রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং ডাকাতি দমনে আজ থেকে প্রতিটি হাউজিংয়ে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো শুরু হয়েছে। শনিবার রাত ১টায় বছিলা সেনা ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান ২৩ ইস্ট বেঙ্গলের উপ-অধিনায়ক মেজর নাজিম আহমেদ।
তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চায় এবং এজন্য সাময়িকভাবে সেনাসদস্যরা এলাকাজুড়ে নিয়মিত টহল ও নজরদারিতে থাকবেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মোহাম্মদপুরের সাধারণ মানুষ যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারে এবং এলাকাটি সন্ত্রাসমুক্ত রাখা সম্ভব হয়।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৪৫ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। অভিযান চলাকালে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান মেজর নাজিম আহমেদ। এর মধ্যে দুজন দুর্ধর্ষ ডাকাতও রয়েছে যারা সম্প্রতি স্থানীয় একটি সুপারশপে ডাকাতি করেছিল।
এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, মোহাম্মদপুরের মানুষ যেন নিরাপদে দিনযাপন করতে পারে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের এই অভিযান চলবে এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
রোববার থেকে মোহাম্মদপুরের প্রতিটি হাউজিং এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। দু-তিনটি হাউজিং এলাকার মধ্যে একটি করে ক্যাম্প তৈরি করে সেনাসদস্যরা টহল দেবে এবং সার্বক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে। সেনা ক্যাম্পগুলো থেকে নিয়মিত টহলের মাধ্যমে এলাকায় সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হবে এবং যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম রোধ করা হবে।
মেজর নাজিম আহমেদ আরও বলেন, “প্রতিটি ক্যাম্প থেকে স্থানীয় মানুষ এবং অফিসগামী কর্মজীবী, শিক্ষার্থীদের চলাচল নিরাপদ রাখার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা সর্বদা তৎপর থাকবেন।”
মেজর নাজিম জানান, মোহাম্মদপুর এলাকায় ২৭-২৮টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে, যা এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এর মধ্যে বেশিরভাগ সদস্যই জেনেভা ক্যাম্প থেকে আসা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এই কিশোর গ্যাংগুলো চাঁদাবাজি, ছিনতাই, এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে থাকে। সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে ১৫-১৬ জন গ্যাং লিডার বা গডফাদারকে আটক করা হয়েছে, যারা এসব অপরাধ পরিচালনা করত।
এ বিষয়ে মেজর নাজিম বলেন, “এরা শুধুমাত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপেই জড়িত নয়, অফিসগামী এবং শিক্ষার্থীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতো। আমরা নিশ্চিত করছি, এদের কোনো সদস্যকে ছাড় দেওয়া হবে না, এবং ভবিষ্যতে এদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মোহাম্মদপুর এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের ফলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে এবং জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা ফিরে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে এই উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “এই এলাকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য আমরা অনেকদিন ধরেই সমস্যার মধ্যে ছিলাম। সেনাবাহিনীর এই ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে আমরা আবারও নিরাপদ বোধ করছি।”
সেনাবাহিনীর এই বিশেষ উদ্যোগের ফলে মোহাম্মদপুর এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, “আমরা এলাকাটিকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করবো এবং জনগণের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।”
দেশের অন্য এলাকাগুলোতেও এমন পদক্ষেপের আশা করছেন সাধারণ মানুষ। সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ জনগণের মধ্যে সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নতুন আশার সঞ্চার করেছে।