বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্র ধরে জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ১০ মন্ত্রীসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ১৮ নভেম্বর তাদেরকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। দীর্ঘ কয়েক মাসের তদন্ত শেষে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন, যেখানে অভিযুক্তদের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উপস্থিত করা হবে।
ট্রাইব্যুনালের নির্দেশিত ১৪ জনের মধ্যে আছেন বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন—
- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
- সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান
- সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি
- রাশেদ খান মেনন
- হাসানুল হক ইনু
- জুনাইদ আহমেদ পলক
- তৌফিক ইলাহী চৌধুরী
- সালমান এফ রহমান
- আব্দুর রাজ্জাক
- শাহজাহান খান
- কামাল আহমেদ মজুমদার
- গোলাম দস্তগীর গাজী
- জিয়াউল আহসান
- বিচারপতি মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর
এমনকি এ মামলায় সাবেক মন্ত্রী পরিষদের সদস্যসহ আরও বিশিষ্ট ব্যক্তি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নামও রয়েছে। কিছু নাম তদন্তের স্বার্থে এখনো প্রকাশ করেনি প্রসিকিউশন টিম।
এ বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সরকার বিরোধী প্রভাবে গণহত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে ১৭ অক্টোবর আদালত ৪৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
সাম্প্রতিক আদেশের আগে গত ১৭ অক্টোবর একই অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
এ মামলায় অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্তরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এসব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নির্যাতন, গণহত্যা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণসহ নানান মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ উঠে এসেছে তদন্তে। এই গণহত্যার ফলে হাজারো নিরীহ মানুষ তাদের প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ। এসব অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮ নভেম্বর অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনও নিশ্চিত নয় যে সবাই আদালতে হাজির হবেন কিনা। রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই দাবি করছেন যে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতার নতুন মাইলফলক। অন্যদিকে অভিযুক্তদের পরিবার ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।