অর্থনৈতিক স্থবিরতা, সামাজিক অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে কয়েক বছর অতিক্রম করার পর আজ জাপানবাসী ভোট দিচ্ছেন নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে। রবিবার, ২৭ অক্টোবর সকাল থেকে শুরু হওয়া এই সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির জনগণ স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী সরকার গঠনের আশায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। দীর্ঘ সাত দশক ধরে জাপানের ক্ষমতায় আসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। বিগত মাসে দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হওয়া শিগেরু ইশিবার জন্য এটি একটি বড় পরীক্ষা।
শিগেরু ইশিবা, যিনি একসময় জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, দলীয় প্রভাবশালী সদস্যদের বিরোধিতা এবং প্রতিযোগিতা কাটিয়ে এলডিপির প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। ৬৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ১ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণের পর অল্প কিছুদিনের মধ্যে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তিনি নতুন পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে চেয়েছেন। তবে তার নেতৃত্বে এলডিপি কতটা সফল হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা।
এলডিপি সাত দশক ধরে জাপানের রাজনীতিতে শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের জনপ্রিয়তায় হ্রাস ঘটছে। গতবারের নির্বাচনে দলটি যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পেরেছিল, তবে এবারের মতামত জরিপে দেখা যাচ্ছে তাদের সেই অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর এইবারই এলডিপি সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করতে পারে। একাধিক কারণ এর পেছনে ভূমিকা রাখছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, সামাজিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক নীতিমালার প্রতি জনগণের অসন্তোষ।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিগেরু ইশিবা রাজনৈতিক মঞ্চে নিজের উপস্থিতি দৃঢ় করার চেষ্টা করছেন। তবে এলডিপির ভেতরেই তাকে নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মতবিরোধ। বিশেষ করে দলের পুরোনো নেতারা অনেকেই তার পরিকল্পনাগুলোর পক্ষে নন। তাছাড়া ইশিবা সারা দেশে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সমর্থ হলেও তার দলীয় সংগঠন এখনও বিভিন্ন জায়গায় তার পক্ষে কাজ করতে দ্বিধান্বিত।
এবারের নির্বাচনে এলডিপির প্রতিপক্ষ হিসেবে আরও শক্তিশালী বিরোধী দলগুলোর উত্থান দেখা যাচ্ছে। জাপানের বিভিন্ন বিরোধী দলগুলো এলডিপির অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতিমালার সমালোচনা করে আসছে। বিশেষ করে, স্থবির অর্থনীতির বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে, তা নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর পক্ষে কাজ করছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল ভাল ফলাফল করতে পারে এবং তারা সংসদে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করতে পারে।
জাপানে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং সামাজিক সমস্যাগুলো ইশিবা সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নিম্নমুখী অর্থনীতি এবং তরুণ প্রজন্মের চাকরির সুযোগের অভাব নিয়ে দেশজুড়ে অসন্তোষ রয়েছে। তাছাড়া জাপানের জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে সরকারের স্থবিরতা ও গতানুগতিক নীতিগুলো অনেকের জন্য হতাশার কারণ। এসব কারণেই এবারের নির্বাচনে এলডিপির জয়লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রচারণার শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন এলডিপির জন্য সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা কঠিন হতে পারে। যদি এ ধরণের ফলাফল বাস্তবে ঘটে, তাহলে তা ইশিবার নেতৃত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ২০০৯ সালের পর এ ধরনের খারাপ ফলাফলের সম্মুখীন হলে এলডিপিকে নতুন কৌশল নির্ধারণ করতে হতে পারে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল যদি পরাজিত হয়, তাহলে জাপানের রাজনীতিতে একটি নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে।
এবারের সাধারণ নির্বাচন জাপানের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইশিবা নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে এলেও এলডিপির এই বিপর্যয়ের আশঙ্কা তাকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করতে পারে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো শক্তিশালী অবস্থানে থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করলে তা জাপানের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন পরিবর্তন আনতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচন শুধুমাত্র নেতৃত্ব পরিবর্তন নয়, বরং জাপানের ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনায়ও প্রভাব ফেলতে পারে।