চুয়াডাঙ্গায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মহিলা লীগের নেত্রী রুপা খাতুনকে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ভোররাতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামে তার বাড়িতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অবৈধ ইয়ারগান, হাঁসুয়া, বঁটি, বেশ কিছু পাসপোর্ট, ছয়টি খালি দেশীয় মদের বোতল এবং নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সেনাবাহিনী ক্যাম্পের কমান্ডার লে. কর্নেল জয়নুল আবেদীন এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সেনাবাহিনী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রুপাকে আটক করে এবং পরে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, “রাতের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাই এবং তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র ও অবৈধ সরঞ্জাম উদ্ধার করি।”
রুপার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত সামগ্রী ও তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, তিনি একটি ইয়ারগান, হাঁসুয়া, বড় একটি বঁটি, ছয়টি খালি মদের বোতল, বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্ট এবং নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকার মতো অর্থ গোপনে রেখেছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এসব অস্ত্র এবং নগদ অর্থ অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতো। ওসি খালেদুর রহমান আরও জানান, “রুপার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।”
রুপা খাতুনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা, এবং একাধিক বিয়ে করে প্রতারণার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তার প্রভাব এবং অবস্থান ব্যবহার করে তিনি নিয়মিত এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। স্থানীয় লোকজনও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছে। তবে রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে এতদিন তার বিরুদ্ধে তেমন কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
রুপা চুয়াডাঙ্গা মহিলা লীগের একজন প্রভাবশালী নেত্রী ছিলেন, যিনি নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মহিলা লীগ নেত্রী হিসেবে তার বেশ প্রভাব ছিল এবং সে কারণে বহু মানুষ তার কাছে বিচারপ্রার্থী হতে আসতেন। তবে বর্তমানে তার কার্যকলাপ জনসমক্ষে আসার পর অনেকেই তাকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।
রুপার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসীর মতে, তিনি গোপনে একটি মাদক ব্যবসা চক্র পরিচালনা করতেন এবং আশেপাশের এলাকার লোকজনের কাছ থেকে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন করতেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তার নেতৃত্বে মাদক ব্যবসা পরিচালিত হওয়ায় যুবসমাজের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে এবং এ কারণে এলাকার অনেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও সফল হয়নি। রুপার রাজনৈতিক পরিচিতির কারণে তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন ছিল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
রুপার বিরুদ্ধে আরও একটি বিতর্কিত অভিযোগ হলো একাধিক বিয়ে করে প্রতারণা করা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজের প্রভাব ব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন এবং পরে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ। তদন্তে রুপার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও উঠে আসছে।
রুপার এই গ্রেফতারের ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার সাধারণ জনগণ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। স্থানীয়দের অনেকেই মনে করছেন, রুপার মতো নেত্রীদের আইনের আওতায় আনা দরকার। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গার সাধারণ জনগণ এমন নেত্রীর প্রভাব ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় যুবসমাজ তার অপকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জনগণের মাঝে ক্ষোভ ছিল অনেক দিন ধরেই।
সাধারণ জনগণ আরও দাবি করছে, প্রশাসন যেন দ্রুত ও যথাযথ তদন্ত শেষে রুপার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। রুপার মতো নেত্রীরা যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পান, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেত্রীরা ভয় পাবেন।
রুপার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র এবং প্রতারণার অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য প্রশাসন ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চুয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ বলছে, রুপার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বেশ গুরুতর এবং তার অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঠিক তদন্ত করা দরকার।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রুপার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং তার অপকর্মের সম্পূর্ণ তালিকা বের করে আনা হবে।
রুপা খাতুনের মতো নেত্রীর গ্রেফতারের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে এবং সাধারণ জনগণও প্রশাসনের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া আরও বেগবান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত সকল নেতাকে আইনের আওতায় আনতে তৎপর থাকবে বলেও জানিয়েছে।
এই ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সাধারণ মানুষও আশা করছে, সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনতে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।