ঢাকা: ৭৫ বছরের পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, বর্তমানে গুরুতর সংকটে রয়েছে। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির বিরুদ্ধে গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভোটাধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলন দমনে গণহত্যার অভিযোগও করেছে বিভিন্ন মহল।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অজ্ঞাতস্থানে চলে যাওয়ার পর থেকে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই পলাতক রয়েছেন। কেউ কেউ কারাগারে আছেন। তবে দলটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এখনও সক্রিয় রয়েছে এবং বিচ্ছিন্নভাবে পোস্ট করা হচ্ছে। এ অবস্থায় দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আওয়ামী লীগ গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত। বিশ্বে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেমন জার্মানির নাৎসি পার্টি এবং ইতালির ফ্যাসিস্ট পার্টি।”
তিনি আরও বলেন, দলটি জনগণের রায় মেনে নেয়নি এবং এ ধরনের রাজনৈতিক দলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সব পক্ষের সম্মতি পাওয়া গেলে তা বিবেচনা করা হবে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপি মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারা রাজনৈতিক অধিকার হরণের পক্ষে নন। বিএনপি নেতাদের মতে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে এবং গণতান্ত্রিক চর্চার ওপর প্রভাব পড়বে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে একে অপরকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু জনগণের রায় উপেক্ষা করে চললে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাখ্যান করতে পারে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আনু মুহাম্মদ বলেন, “আওয়ামী লীগের অপরাধগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং বিচার করা প্রয়োজন। দল নিষিদ্ধ করলেই রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয় না। বরং এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি দল নিষিদ্ধ করলে তা বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। দ্রুত দোষীদের বিচার নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে দলটির সামনে চ্যালেঞ্জের শেষ নেই। দলের ভেতরে এবং বাইরে অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। দল নিষিদ্ধ করা হলে এর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান কি হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে জনগণের মধ্যে একটি বৃহত্তর সংলাপ শুরু হওয়া প্রয়োজন, যা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে।