লিবারেল পার্টির অভ্যন্তরীণ সংকট: ২৮ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগের দাবি
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বর্তমানে তার দল লিবারেল পার্টির ভিতরে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন। বেশ কয়েকজন দলীয় এমপি তাকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগ করার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এই ঘোষণা দেশটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এনডিটিভির রিপোর্ট অনুযায়ী, বুধবার রাজধানী অটোয়ায় অনুষ্ঠিত এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ১৫৩ জন এমপি অংশগ্রহণ করেন, যেখানে এমপিদের জন্য বক্তব্য দেওয়ার জন্য ২ মিনিট করে সময় বরাদ্দ ছিল।
বৈঠকে অন্তত ২০ জন এমপি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আহ্বান জানান। কিছু এমপি ট্রুডোর পদত্যাগের বিরোধিতা করলেও, তাদের বক্তব্যও রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপে ভরসা রাখতে পারছে না। এমপিরা ট্রুডোকে কীভাবে পদত্যাগ করতে হবে তার একটি রূপরেখাও উপস্থাপন করেন। তবে, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ট্রুডো পদত্যাগ না করেন, তাহলে তার পরিণতি কী হবে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট আলোচনা হয়নি।
বৈঠকে পদত্যাগের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয় যে, ট্রুডোর পদত্যাগ হলে লিবারেল পার্টির পুনরুত্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জো বাইডেনের পদত্যাগের ঘোষণার পর দলের অবস্থান পুনর্বহাল করার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এমপিদের এই যুক্তি দলের মধ্যে ট্রুডোর নেতৃত্ব নিয়ে চরম উদ্বেগের প্রকাশ করে।
গত ৯ বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদে রয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো, কিন্তু সাম্প্রতিক জরিপগুলো তার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। একাধিক সার্ভে রিপোর্ট বলছে, কানাডার অভ্যন্তরে তার গ্রহণযোগ্যতা সংকুচিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, লিবারেল পার্টির প্রতিপক্ষ কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বর্তমানে জরিপের ফলে দেখা যাচ্ছে, কনজারভেটিভ পার্টি লিবারেল পার্টির চেয়ে ২০ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে।
কানাডায় আগামী ২০২৫ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে ট্রুডোর নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার অবনতি হওয়ায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তার নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না। এমপিদের এই ধরনের আল্টিমেটাম কার্যত দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের একটি নতুন দিক উন্মোচন করছে।
ট্রুডোর পদত্যাগের দাবির ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কানাডার রাজনীতিতে একটি নতুন মোড় দেখতে পাচ্ছেন। অনেকে মনে করছেন, যদি ট্রুডো পদত্যাগ করেন, তাহলে এটি লিবারেল পার্টির জন্য একটি বৃহত্তর সংকট সৃষ্টি করতে পারে। আগামী নির্বাচনের জন্য দলের নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন হতে পারে।
বৈঠকে এমপিদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন দেখা গেছে। কিছু এমপি যেখানে ট্রুডোর পদত্যাগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, অন্যদিকে কিছু এমপি তাকে সমর্থন জানিয়ে তার নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বিভাজন আগামী দিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, জনসাধারণের মধ্যে ট্রুডোর প্রতি হতাশা বেড়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট এবং সামাজিক ইস্যুতে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। এর ফলে, দলের জন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।
ট্রুডোর নেতৃত্ব এবং দলীয় একাত্মতা বজায় রাখার জন্য আগামী দিনগুলোতে সরকারের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এমপিদের দাবি এবং জনসাধারণের প্রত্যাশার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ওপর চাপ বাড়ছে, এবং এমপিদের পদত্যাগের আহ্বান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ২৮ অক্টোবরের পর এই সংকটের নতুন মাত্রা প্রকাশিত হবে, যা দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে। দলটির বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা ক্রমশই বেড়ে চলেছে, যা আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।