নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে কথিত স্ত্রীর করা ধর্ষণ মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মামুনুল হককে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেসমিন আরা বেগম এ রায় ঘোষণা করেন। মামুনুল হক রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে কথিত স্ত্রীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। তাঁরা মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা নারীকে তাঁর স্ত্রী বলে পরিচয় দেন, তবে অভিযোগ ওঠে যে তিনি সেই নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নন। এই ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়, এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে, হেফাজত ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
এই ঘটনার ১৫ দিন পর, ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল পুলিশ মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। রয়েল রিসোর্টের ঘটনার ২৭ দিন পর, ৩০ এপ্রিল, কথিত স্ত্রী মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। বাদী অভিযোগ করেন যে, মামুনুল হক তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা হয়।
২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর পর, ৩ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলাটি চলতে থাকে, এবং বিভিন্ন পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত আজ রায় প্রদান করেন।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আজ তাঁকে বেকসুর খালাস দেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. রোমেল মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি, এবং বিচারক মামুনুল হককে খালাস দিয়েছেন।
মামুনুল হকের আইনজীবী এ কে এম ওমর ফারুক নয়ন জানান, তাঁরা আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন যে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং বাদী নিজেই মামুনুল হককে তাঁর বৈধ স্বামী হিসেবে স্বীকার করেছেন। বাদীর ছেলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর মা ও মামুনুল হক বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। এসব যুক্তি ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত মামুনুল হককে খালাস দেন।
মামলাটিকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই রাজনৈতিক সংযোগের অভিযোগ ওঠে। মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং তাঁর গ্রেপ্তারের সময় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্ক দেখা দেয়। তাঁর গ্রেপ্তারের পরপরই হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং মামলাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবি করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবীরা মামলাটিকে রাজনৈতিকভাবে সংঘটিত নয় বলে দাবি করে বলেছেন, মামুনুল হক ধর্ষণ করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যদিও আদালত এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন এবং যথাযথ প্রমাণের অভাবে মামুনুল হককে খালাস দিয়েছেন।
মামুনুল হক আদালত থেকে খালাস পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি এও জানান, সত্যের জয় হয়েছে এবং আল্লাহ তাঁর প্রতি করুণা করেছেন।
মামুনুল হকের খালাস পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামী সংগঠনগুলো তাঁর মুক্তির জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, বিরোধী পক্ষগুলোর দাবি, মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি এবং আরও গভীরভাবে প্রমাণ সংগ্রহ করা প্রয়োজন ছিল।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার রায় দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালতের রায়ে তাঁকে খালাস দেওয়ার পর নতুন করে এই মামলাকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দেবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।