বাংলাদেশ সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাল আমদানিতে শুল্ক ও কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চালের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ও কর হ্রাস করে চালের আমদানি ব্যয় কমানো হয়েছে, যার মাধ্যমে বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে চালের আমদানির খরচ কমে যাবে এবং বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।
রোববার (২০ অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে রেগুলেটরি শুল্ক (আরডি) ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে এবং আগাম কর ৫ শতাংশ পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো বাজারে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সাধারণ মানুষের জন্য চালের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। চাল আমদানিতে শুল্ক ও কর কমানোর ফলে দেশের চালের বাজারে একটি স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এনবিআরের পরিচালক সৈয়দ এ মু’মেন জানিয়েছেন, চাল আমদানির ওপর শুল্ক ও কর কমানোর ফলে আমদানির খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, চালের আমদানির ব্যয় ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। এর ফলে আমদানিকারকরা কম খরচে চাল আনতে পারবেন, যা সরাসরি বাজারে চালের দামে প্রভাব ফেলবে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার আশা করছে, বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নেওয়া এই পদক্ষেপ চালের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
গত কয়েক মাস ধরে চালের বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে। সরকার এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো আমদানি শুল্ক ও কর কমানো।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্ক ও কর কমানো একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। সরকার মনে করছে, চাল আমদানির ব্যয় হ্রাসের ফলে সরবরাহের ঘাটতি পূরণ হবে এবং দেশীয় বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। চালের দাম কমাতে এনবিআর এর আগে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল, তবে এবার আরও কার্যকর ফলাফল আশা করা হচ্ছে।
চাল বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য, যা দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকার প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত। তাই চালের মূল্য বৃদ্ধি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। শুল্ক ও কর হ্রাসের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি করলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে এবং দেশের কৃষি খাতের ওপর চাপ কমবে।
সরকারের এই পদক্ষেপে সরাসরি উপকৃত হবে দেশের সাধারণ মানুষ এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী। চালের দাম কমলে তা শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেই না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশে চাল আমদানি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে যখন স্থানীয় উৎপাদন কম থাকে। আমদানির ওপর শুল্ক ও কর কমানোর ফলে ব্যবসায়ীরা বেশি পরিমাণ চাল আমদানি করতে পারবেন, যা সরাসরি বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
ব্যবসায়ীরা এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, কারণ এতে তাদের আমদানি খরচ কমবে এবং লাভজনকভাবে চাল বাজারজাত করা সম্ভব হবে। ফলে দেশের বাজারে চালের মূল্য সুষম থাকবে এবং সরবরাহ স্থিতিশীল থাকবে।
সরকারের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং চালের দাম কমে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে। সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে।
সরকার আশা করছে, শিগগিরই এই নির্দেশনা কার্যকর হবে এবং বাজারে এর প্রভাব দৃশ্যমান হবে। চালের দাম কমানোর পাশাপাশি বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অন্যান্য পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে।
চাল আমদানিতে শুল্ক ও কর কমানোর মাধ্যমে সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে যা বাজারে চালের মূল্য কমাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সাধারণ মানুষ এবং নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে, এবং দেশের অর্থনীতিতে একটি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।