সামাজিক মাধ্যমে মানবিক মুখোশ, কিন্তু বাস্তবে নির্মম নির্যাতন
এক গৃহকর্মীর ওপর চার বছরের ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা আমাদের সামনে এক বেদনাদায়ক সত্য তুলে ধরেছে। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, তার সামনের চারটি দাঁত ফেলে দেয়া হয়েছে, শরীরের বিভিন্ন অংশ গরম পানিতে ঝলসে দেয়া হয়েছে এবং তার হাত চুল সোজা করার ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমন কোনো নির্যাতন নেই যা করা হয়নি এই অসহায় গৃহকর্মীর ওপর। অথচ তার নির্যাতনকারীকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, সে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে টিকটক এবং ফেসবুকে এই নির্যাতনকারী নিজেকে মানবিক ও সদয় ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে।
এই গৃহকর্মীর ওপর চার বছর ধরে নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয়ার জন্য নানা পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে দগ্ধ হওয়ার চিহ্ন, তার হাত পুড়ে যাওয়ার দাগ, এবং দাঁতগুলো ভেঙে ফেলার ঘটনা তার কষ্টের মাত্রাকে আরও স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলে।
নির্যাতনকারীর চেহারা দেখে কেউ ধারণাও করতে পারবে না যে, সে এমন ভয়াবহ কাজ করতে পারে। ফেসবুক এবং টিকটকের বিভিন্ন পোস্টে সে নিজেকে সহানুভূতিশীল ও দয়ালু মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তার প্রতিটি পোস্ট এমনভাবে সাজানো যে, সমাজের কেউই তাকে সন্দেহ করতে পারে না।
চার বছর ধরে চলা এই অত্যাচারের অবসান ঘটে যখন কিছু মানবিক মানুষ এগিয়ে আসেন। গৃহকর্মীটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়, এবং তাকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নেওয়া হয়। উদ্ধারকারীরা তাকে যখন খুঁজে পান, তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে, চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি চিকিৎসা শুরু করেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নির্যাতিত গৃহকর্মীর পুরোপুরি সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে। শরীরের গভীর ক্ষত এবং মানসিক ট্রমা কাটিয়ে উঠতে তাকে বিশেষ মনোচিকিৎসা ও শারীরিক পুনর্বাসনের প্রয়োজন। তার ওপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতন তাকে শারীরিকভাবে পঙ্গু করে ফেলেছে এবং মানসিকভাবে তাকে গভীর ক্ষত দিয়েছে।
এই ঘটনার তদন্ত চলছে এবং নির্যাতনকারীকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসন কাজ করছে। নির্যাতিত গৃহকর্মীর ওপর যে অন্যায় হয়েছে, তার বিচার পাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো একত্রে কাজ করছে। ইতোমধ্যে নির্যাতনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
আদরের ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সমাজের দুর্বল ও অসহায় মানুষদের প্রতি যে অবিচার হচ্ছে, তা প্রতিরোধে আমাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া থেকে মুক্ত রাখতে আমাদের সচেতনতার প্রয়োজন।
গৃহকর্মী আদরের ওপর চালানো নির্যাতন একটি বড় শিক্ষা। সমাজে মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই নির্যাতনের ঘটনা আমাদের মনকে নাড়া দেয়, এবং আমাদের আহ্বান জানায় যে, আমরা যেন নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াই।
এখন সময় এসেছে আমাদের সমাজে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যেখানে কেউ আর নির্যাতনের শিকার না হন, আর মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকে।