বিএনপি-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্বে আলোচিত মো. সেলিম খান ওরফে ভেজাইল্যা সেলিমের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড
ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সেলিম খান ওরফে ভেজাইল্যা সেলিমের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর লাগাতার হামলার অভিযোগ উঠেছে। এক সময়ের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম, সম্প্রতি বিএনপিতে যোগদানের পরও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। রাজনীতির মঞ্চে তার এই আচরণ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষত, ১৬ অক্টোবরের একটি সমাবেশে সেলিমের নেতৃত্বে বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলা ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
মো. সেলিম খান, যিনি স্থানীয়ভাবে ভেজাইল্যা সেলিম নামে পরিচিত, রোয়াইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের এমপিসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তার অসংখ্য ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে রয়েছে, যা তার রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট করে।
তবে গত ৫ আগস্টের পর থেকে সেলিমের রাজনৈতিক জীবন সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি রাতারাতি বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে আবির্ভূত হন এবং এখন বিভিন্ন প্রোগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। এমনকি তিনি নিজেকে বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতিও বলে দাবি করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তার এই হঠাৎ রাজনৈতিক রঙ বদলের আসল উদ্দেশ্য কী?
১৬ অক্টোবর ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নে বিএনপির একটি সমাবেশে বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম তার সমর্থকদের নিয়ে অংশ নেন। এই সমাবেশের পরপরই ভেজাইল্যা সেলিম তার দলবল নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। এই হামলার ফলে ইব্রাহিমসহ অন্তত ১০ জন আহত হন, যার মধ্যে ইব্রাহিম বর্তমানে রাজধানীর নিওরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ইব্রাহিম মেম্বারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সমাবেশে অংশ নেয়ার পরই তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে সেলিম হামলা চালান। এ সময় ইব্রাহিমের দুই ছেলেসহ আরও অনেকে আহত হন। ইব্রাহিমের দাবি, সেলিম দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এলাকাবাসীর ওপর নানা রকম অত্যাচার করে আসছেন এবং এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় থেকেও সেই পুরোনো আচরণ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, সেলিম খান দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ধামরাই এলাকায় অবৈধ ব্যবসা ও জমি দখল করে বিপুল অর্থ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ ও মোহাদ্দেস হোসেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেলিম স্থানীয় এমপি বেনজীর আহমেদের প্রভাব ব্যবহার করে অনেককেই ভয় দেখিয়ে তাদের থেকে অবৈধ সুবিধা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করেই তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার সখ্যতা বাড়তে থাকে এবং দ্রুত বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। তবে তার আচরণ বদলায়নি। তার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সহিংসতা চালানোর অভিযোগ বারবার উঠছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সেলিম খান বলেন, ইব্রাহিম মেম্বারের ছেলে সাইদুরের সঙ্গে তার আর্থিক লেনদেনের একটি বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জের ধরেই ১৬ তারিখের সমাবেশে প্রথমে ইব্রাহিম মেম্বার ও তার লোকজন তাকে টানাহেঁচড়া করেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর তিনি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম মাস্টারের সঙ্গে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেন। তবে সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ইব্রাহিম মেম্বার ও তার দলবল তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ করেন সেলিম।
তিনি দাবি করেন, এলাকার কিছু মানুষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি কোনোদিনই আওয়ামী লীগ করিনি, আমি একজন বিএনপি কর্মী। কিন্তু এলাকার কিছু মহল আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কাজ করছে।”
সেলিম খানের রাজনৈতিক রঙ বদলের এই ঘটনা ধামরাই এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগের পাশাপাশি, অতীতে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগও তাকে ঘিরে বিতর্ক বাড়িয়েছে। এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতির জটিলতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মো. সেলিম খান ওরফে ভেজাইল্যা সেলিমের রাজনৈতিক জীবন এবং তার কর্মকাণ্ড নিয়ে ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার পরও তার সহিংস আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করা এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানো একাধিকবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। ফলে, সেলিমের এই কর্মকাণ্ড স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।