অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে বৃষ্টির পূর্বাভাস ও ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ লঘুচাপটি পরবর্তীতে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত পূর্বাভাসে রবিবার (২০ অক্টোবর) এ তথ্য জানানো হয়। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, রোববার এবং সোমবার (২১ অক্টোবর) দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের আগে এই দুই দিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হবে। তবে ২৩ অক্টোবর, বুধবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হতে যাওয়া এই লঘুচাপ নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে। যদিও এখনও এটি পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা যে এটি ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, “এখন পর্যন্ত এতটুকুই বোঝা যাচ্ছে যে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে চলেছে। তবে লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। আমরা সাধারণত ২৪ ঘণ্টা আগে সঠিক তথ্য দিয়ে থাকি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমানও একই ধরনের মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “লঘুচাপের কারণে আমরা ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা করছি। তবে লঘুচাপ সৃষ্টির পরেই এটির সঠিক গতিপথ এবং শক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বঙ্গোপসাগরে অক্টোবর মাসে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে একটি লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে সাধারণত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়।
লঘুচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তাহলে এর নাম হবে ‘ডানা’। এই নামটি কাতারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে বেছে নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের নামকরণ প্রক্রিয়া আবহাওয়া পরিস্থিতি সহজে চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
বর্তমান আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও, রাতের তাপমাত্রা কমে আসতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাবে, তবে বুধবার থেকে তা আবার বেড়ে যেতে পারে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এই ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তন স্বাভাবিক এবং এতে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে উপকূলবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়গুলি সাধারণত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এসব প্রভাবের মধ্যে রয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস এবং শক্তিশালী বাতাস। এসব ঘূর্ণিঝড় কৃষিক্ষেত্র, গবাদি পশু এবং সাধারণ মানুষের জীবনে বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদি লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে এবং সেখানকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছরই কয়েকটি লঘুচাপ এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে কিছু কিছু ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এই ঘূর্ণিঝড়গুলি উপকূলীয় এলাকায় তীব্র বন্যা, ভূমিধস এবং প্রাণহানি ঘটাতে সক্ষম। অক্টোবর মাস সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এই সময়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, যা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ।
বিগত কিছু বছর ধরে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলির মধ্যে ‘ফণী’, ‘আম্ফান’, এবং ‘বুলবুল’ উল্লেখযোগ্য। এসব ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ, ভারত এবং মিয়ানমারের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়গুলির প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ, সাইক্লোন শেল্টার স্থাপন, এবং আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সরকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের সুরক্ষার জন্য ইতোমধ্যে নানা ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় আগাম সতর্কতা সংকেত জারি করা হতে পারে, এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে নিয়মিতভাবে আপডেট দেওয়া হচ্ছে, এবং ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আরও সঠিক তথ্য জানা গেলে তা দ্রুত জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে দায়িত্বশীলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা বরাবরই থাকে, এবং এটি নতুন কিছু নয়। তবে পূর্বাভাসের ভিত্তিতে এবারের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ নিয়ে জনগণকে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক প্রস্তুতি এবং সতর্কতার মাধ্যমে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।