ঢাকা: সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ না করার জোর দাবি জানিয়েছে ‘ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (টোয়াব)। শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টোয়াবের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মো. রাফেউজ্জামান এ সময় দ্বীপের টেকসই পর্যটন ও স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দেন।
টোয়াবের মতে, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের সংখ্যা সীমিতকরণ এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, দ্বীপে পর্যটন নির্ভর হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পর্যটন খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, বিশেষত সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো পর্যটন কেন্দ্রিক অঞ্চলে। সেখানে স্থানীয় জনগণ মূলত পর্যটন থেকে আয়ের ওপর নির্ভরশীল এবং এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা তাদের আয়ের সুযোগকে সংকুচিত করবে।
সংগঠনটি সেন্টমার্টিন দ্বীপকে একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব করে। এর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। টোয়াবের দাবির মধ্যে রয়েছে:
পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিতকরণ: দ্বীপে পর্যটকদের জন্য কড়াকড়ি বিধিনিষেধ আরোপ না করে, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি এড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
কৌশলগত পর্যটন নীতিমালা প্রণয়ন: সরকারের উচিত দ্বীপের টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে অবদান রাখা, এবং পর্যটন-সম্পর্কিত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ রক্ষা: সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে কোনো পরাশক্তির স্বার্থসিদ্ধি হতে দেয়া যাবে না। দ্বীপটির নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
টোয়াবের দাবির মধ্যে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত নিরাপদ ও উপযুক্ত জাহাজ চলাচলের পথ নির্ধারণ। বর্তমানে এই পথে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেয় টোয়াব। বিশেষ করে, দ্বীপে পর্যটকদের জন্য স্বল্পমাত্রার হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তোলা, রিসাইক্লিং সুবিধা স্থাপন এবং সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দ্বীপের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং স্থানীয় জনগণের জীবিকা রক্ষা করা যাবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশগত অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিতে রয়েছে। অতিরিক্ত পর্যটক আগমন, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্লাস্টিক দূষণ এই দ্বীপের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলো কমানো যেতে পারে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অর্থনীতি মূলত পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটকদের আকর্ষণ করে স্থানীয় ব্যবসা, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন এবং অন্যান্য সেবামূলক কাজগুলো। রাত্রিযাপন নিষিদ্ধকরণ বা পর্যটক সীমিত করলে এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হতে পারে। ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা এবং সামাজিক অবস্থান বড় ধরনের সংকটে পড়বে।
টোয়াবের পরামর্শ
১. টেকসই পর্যটন নীতি গ্রহণ: সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষা এবং স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। টেকসই পর্যটনের জন্য পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ২. পর্যটকদের জন্য সঠিক নির্দেশিকা প্রণয়ন: দ্বীপে পর্যটকদের আচরণ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এতে তারা পরিবেশ রক্ষায় কীভাবে অবদান রাখতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা পাবে। যেমন: বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি না করা ইত্যাদি। ৩. নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা: দ্বীপে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য জাহাজ চলাচলের সঠিক নিয়ম এবং নীতিমালা নির্ধারণ করে জাহাজগুলোর সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সুরক্ষিত এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় রাখতে টোয়াব সরকারের নীতি প্রণয়নে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি মনে করে, সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করলে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং একইসাথে পর্যটন খাতের বিকাশ ঘটানো যাবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। তবে, পরিবেশের সুরক্ষা এবং পর্যটনের টেকসই উন্নয়নের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। টোয়াবের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করলে দ্বীপের পরিবেশ এবং স্থানীয় জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব হবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই দাবিগুলো নিয়ে চিন্তা করা এবং সেন্টমার্টিনকে টেকসই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া।
—