একজন পিতা হওয়ার স্বপ্ন, সন্তানের প্রতি ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে গায়ে ট্যাটু করানো এবং পরবর্তীতে সেই সন্তানের আসল পিতা না হওয়ার করুণ বাস্তবতা—এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ভিনিসিয়াস টোবিয়াস। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ফুটবল মাঠের বাইরে ভিনিসিয়াসের ব্যক্তিগত জীবনের এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
২০ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ভিনিসিয়াস টোবিয়াস যখন নিজের প্রথম সন্তান মাইতে-এর জন্ম উদযাপন করতে চাইলেন, তখন তিনি বেছে নেন ট্যাটু করার একটি আবেগঘন উপায়। টোবিয়াস তার বাহুতে সন্তান মাইতে-এর নামসহ একটি ট্যাটু আঁকেন, যেখানে লেখা ছিল “মাইতে, আমি তোমাকে ভালোবাসি”। এই ট্যাটু ছিল তার বাবার ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রকাশ।
তিনি সন্তানের প্রতি ভালোবাসার এ চিহ্নটি মনের গভীর থেকে ধারণ করেছিলেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় যা পুরো ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। ফলাফলটি শুধু ভিনিসিয়াসের হৃদয় ভেঙে দেয়নি, বরং তাকে এক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন করে তুলেছিল।
ভিনিসিয়াসের স্ত্রী ইনগ্রিড লিমার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময়েই মাইতের জন্ম হয়। সেই সময় তাদের সম্পর্ক অস্থিতিশীল থাকলেও ভিনিসিয়াস সন্তানকে নিজের মনে করেছিলেন এবং তার যত্ন নিয়েছিলেন। তবে ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা যায় যে, ভিনিসিয়াস টোবিয়াস সেই সন্তানের প্রকৃত পিতা নন।
ব্রাজিলিয়ান মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, মাইতে-এর প্রকৃত পিতা একজন অ্যাকাই ডেলিভারি ম্যান। এই সত্য উদঘাটনের পর ভিনিসিয়াসের অনুভূতির পরিমাণ কেবল তিনি নিজেই জানেন। তবে তিনি এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।
ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর, ইনগ্রিড লিমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, মাইতে গর্ভধারণের সময় তাদের সম্পর্ক একত্রিত ছিল না। তিনি আরও জানান, সেই সময়ে তিনি এবং ভিনিসিয়াস উভয়েই পৃথকভাবে অন্য সম্পর্কে ছিলেন। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা গেছে, মাইতে প্রকৃতপক্ষে ভিনিসিয়াসের সন্তান নয়।
লিমা তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, “আমি এমন কিছু নিয়ে একটি বিবৃতি দিতে এসেছি যা ক্রমশ বিরক্তিকর হয়ে উঠছে। ভিনিসিয়াস এবং আমি কিছু সময় ধরে একসাথে ছিলাম না। সেই সময়ে আমরা উভয়েই আমাদের জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে মাইতের জন্ম হয় এবং ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা যায় যে, মাইতে ভিনিসিয়াসের সন্তান নয়।”
এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতে হয়েছে ভিনিসিয়াসকে। বাবার ভালোবাসা প্রকাশ করার পরে এমন সংবাদ পাওয়া তার জন্য সত্যিই মর্মান্তিক। এখন পর্যন্ত তিনি ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। ভিনিসিয়াস, যিনি একজন প্রতিভাবান ফুটবলার এবং রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক খেলোয়াড়, এই ঘটনা তাকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করেছে।
তবে ভিনিসিয়াসের নীরবতা তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছুই প্রকাশ করছে। তার জন্য এ ঘটনা কেবল একটি সম্পর্কের ভাঙন নয়, বরং পিতৃত্বের আকাঙ্ক্ষার ধ্বংসও। ট্যাটু করার মাধ্যমে ভালোবাসার যে প্রতীক তিনি স্থাপন করেছিলেন, সেটি এখন তার জীবনের একটি চরম হতাশার স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনার পর ভিনিসিয়াসের ব্যক্তিগত জীবন ও নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন ওঠেছে। একজন পুরুষের জন্য পিতৃত্ব অনেক বড় দায়িত্ব এবং যখন সেই পিতৃত্বের দায়িত্ব হঠাৎ করে ভেঙে পড়ে, তখন তা মানসিকভাবে বিধ্বংসী হতে পারে। বিশেষত, যে সন্তানকে তিনি ভালোবেসেছিলেন এবং যার প্রতি নিজের সত্তা উৎসর্গ করেছিলেন, সেই সন্তানের প্রতি পিতৃত্ব হারানোর দুঃখ অসীম।
এ ঘটনা শুধু ভিনিসিয়াসের ব্যক্তিগত জীবনকে আলোড়িত করেনি, বরং এটি সামাজিকভাবেও আলোচিত হয়েছে। তার ভক্তরা এবং সামাজিক মিডিয়ার অনুসারীরা এই ঘটনার প্রতি তাদের সমবেদনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই ইনগ্রিড লিমার সিদ্ধান্ত এবং তার আচরণ নিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন। তবে লিমার যুক্তি ছিল তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে এই পরিস্থিতির উদ্ভব।
অন্যদিকে, ভিনিসিয়াস এই সম্পর্ককে কীভাবে সামলাবেন এবং তার ভবিষ্যত সিদ্ধান্ত কী হতে পারে, তা নিয়ে সবাই কৌতূহলী। এ পরিস্থিতি বিবাহ বিচ্ছেদ এবং পিতৃত্বের দায়িত্ব নিয়ে আইনি প্রশ্নও তুলে আনতে পারে।
ফুটবলের মাঠে ভিনিসিয়াস যেমন শক্তিশালী এবং প্রতিভাবান, ঠিক তেমনই জীবনের এই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে তার মানসিক শক্তি প্রয়োজন হবে। তার ক্রীড়া জীবনে এ ঘটনা তার পারফরম্যান্সে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একজন ফুটবলার এবং একজন মানুষ হিসেবে তার মানসিক শক্তি এবং ব্যক্তিগত সাহসিকতার ওপর নির্ভর করছে তার ভবিষ্যত।
ভিনিসিয়াস এই ঘটনা থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করবেন এবং কীভাবে তার জীবন ও সম্পর্কগুলোর পুনর্গঠন করবেন, তা দেখার বিষয়। তবে একমাত্র সময়ই বলে দেবে যে, তিনি তার জীবনের এই বড় ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারবেন কি না।
ভিনিসিয়াস টোবিয়াসের জীবনে এই ঘটনাটি ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিকভাবে গভীর প্রভাব ফেলেছে। পিতৃত্বের আবেগঘন বাস্তবতা থেকে হঠাৎ করে এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি হওয়া তার জন্য একটি বিশাল আঘাত। ট্যাটুর মাধ্যমে যে ভালোবাসার প্রতীক তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা এখন তার জীবনের একটি করুণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।