গত এক সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়েছে। তবে বিপরীতে সবজির বাজারে এখনো কোনো সুখবর নেই, বরং অনেক সবজির দাম ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। শুক্রবার (১৮ই অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডিমের দাম কমলেও সবজির চড়া দাম ক্রেতাদের ভোগান্তিতে রেখেছে।
শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁও, কাপ্তান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, ডিমের দাম কমেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। যেখানে এক সপ্তাহ আগে ডজনপ্রতি ডিমের দাম ছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, এখন তা কমে এসেছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। কোথাও কোথাও ডিমের দাম ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তবে তা এখনও গত সপ্তাহের তুলনায় কম।
ক্রেতাদের মতে, ডিমের দাম এখন কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। এক ক্রেতা বলেন, “আগের তুলনায় ডিমের দাম কমেছে বলে মনে হচ্ছে। ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় ডজন ডিম এখন কিনতে পারছি, যা কিছুদিন আগেও অনেক বেশি ছিল।”
ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া এবং আমদানিতে শুল্ক কমানোর ব্যবস্থা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৭ই অক্টোবর একটি আদেশ জারি করেছে, যার মাধ্যমে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই সুবিধা আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এছাড়াও, ডিম আমদানিতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, যাতে ডিমের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে।
এছাড়া, ঢাকার প্রধান পাইকারি বাজারগুলোতে ডিম সরবরাহ বৃদ্ধি করতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন ২০ লাখ ডিম সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে এই সরবরাহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা ধীরে ধীরে সারা দেশে এর প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির মতে, ঢাকায় এই উদ্যোগের মাধ্যমে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে, যা অন্যান্য জেলাতেও প্রভাব ফেলবে।
ডিমের দাম কমার পেছনে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগের বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে এর আগে কেন ডিমের দাম এতটা বেড়ে গিয়েছিল, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি এবং উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে চার কোটি। তবুও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং কিছু খামার বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়, যা দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
ডিমের দাম কমলেও সবজির বাজারে এখনো কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি। রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম ক্রমশ বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, পেঁপে ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম এখনো বেশ চড়া। পেঁপে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা তুলনামূলক কমদামি সবজি হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। তবে পটল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গোল বেগুন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, এবং টমেটো ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালীন সবজি বাজারেও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা এবং মুলা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, এবং ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে দামের এই ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহের ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে। বিশেষত, বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় অনেক খামারে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এছাড়াও পরিবহন খরচ এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলেও সবজির দাম ক্রমশ বাড়ছে।
তবে ক্রেতারা মনে করছেন, বাজারে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের অভাবও সবজির দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। তারা আশা করছেন, শীতকালীন সবজি পুরোপুরি বাজারে আসার পর দাম কিছুটা সহনীয় হবে।
ডিমের দাম কমায় ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি মিললেও সবজির বাজারে চড়া দামের কারণে সাধারণ মানুষ এখনো বিপাকে রয়েছে। এক ক্রেতা বললেন, “ডিমের দাম কমলেও সবজির দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিদিনের বাজার করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে সবজির দাম এত বেশি যে অনেক কিছু কিনতে পারছি না।”
আরেক ক্রেতা বলেন, “বাজারে এসে দেখি, প্রতিদিনই সবজির দাম বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সংসার চালাবো, বুঝতে পারছি না।”
সবজির বাজারের এই ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। বাজার তদারকি, সরবরাহের ঘাটতি পূরণ এবং উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা প্রদান এবং ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যেতে পারে।
ডিমের বাজারে সাম্প্রতিক মূল্যহ্রাস ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও সবজির দাম এখনো নাগালের বাইরে। ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় চাপ বেড়েই চলেছে। বাজারের এ পরিস্থিতিতে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং তদারকি ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে, যাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বজায় থাকে এবং বাজার স্থিতিশীল হয়।