ঢাকা, ১৫ অক্টোবর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া নাফিসা হোসেন মারওয়া ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সাভারের শাহাজউদ্দিন সরকার মডেল হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দেওয়া নাফিসা পেয়েছেন জিপিএ ৪.২৫। আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফলে তার এ সাফল্য এসেছে। তবে তার এ সাফল্য আজ পরিবারের জন্য এক ধরনের কষ্টের স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে, কারণ গত ৫ আগস্ট আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তিনি।
নাফিসার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা এখনও শোকের মধ্যেই রয়েছেন। আজ বিকেলে সাভারের নামাবাজার এলাকায় তার মামার বাসায় গেলে পরিবারের সদস্যরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাফিসার জীবন ও স্বপ্নের কথা স্মরণ করেন। নাফিসা ছিলেন আবুল হোসেন ও কুলসুম বেগমের দুই মেয়ের মধ্যে বড়। তার মা প্রবাসে কাজ করতেন, আর বাবার কর্মস্থল ছিল টঙ্গী এলাকায়। পড়াশোনার সুবিধার জন্য নাফিসা সাভারের মামার বাসায় থেকে কলেজ জীবন কাটাতেন।
গত ৫ আগস্ট সাভারের থানা রোড মুক্তির মোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হন নাফিসা। সেদিন দুপুর ৩টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেন তিনি। নাফিসার ছোট মামা হজরত আলী রেজা বলেন, “নাফিসা ছিলেন জেদি ও দৃঢ় মনোবলের মানুষ। ৩ আগস্ট থেকে তিনি সরাসরি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তিনি নিজের বিশ্বাস থেকে সরেননি।”
নাফিসার মায়ের জন্য এ মুহূর্তটি আরও বেদনাদায়ক। কুলসুম বেগম ভেজা চোখে স্মৃতিচারণ করে বলেন, “মেয়ের ইচ্ছা ছিল ফটোগ্রাফার বা গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ার। রেজাল্ট বের হলে তাকে ল্যাপটপ কিনে দেওয়ার কথা ছিল। সে চেয়েছিল নিজের আয় দিয়ে জমি কিনে বাড়ি বানাবে। কিন্তু আজ তার রেজাল্ট দেখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমি আজ তাকে দেখে যেতে পারলাম না।”
নাফিসার মৃত্যুর পর তার বাবার ইচ্ছায় তাকে টঙ্গীতে দাফন করা হয়। তার স্বপ্নগুলো অপূর্ণ রয়ে গেলেও, তার সাহসিকতা এবং দেশপ্রেম পরিবারসহ অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।