দীর্ঘ দুই মাস ২৭ দিনের অপেক্ষার পর অবশেষে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর, ২০২৪) থেকে মেট্রোরেল এই স্টেশন থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে। ঢাকাবাসীর কাছে এই খবরটি একদিকে যেমন স্বস্তির, অন্যদিকে শহরের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাংশের যাতায়াতে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। মিরপুর-১০ স্টেশন পুনরায় চালুর মাধ্যমে মেট্রোরেল ব্যবহারকারী যাত্রীদের যাতায়াতের সময় সাশ্রয় ও সুবিধা বাড়বে।
গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আওতায় মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশের একটি বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের ছোড়া আগুনের কালো ধোঁয়া মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে জননিরাপত্তার স্বার্থে ডিএমটিসিএল (ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড) সেদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয়। এর পরদিন ১৯ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেট্রোরেল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। এ সময় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে বিক্ষোভকারীদের হামলা ও ভাঙচুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, যার ফলে স্টেশন দুটি বন্ধ রাখতে হয়।
আগের আওয়ামী লীগ সরকার স্টেশন দুটি মেরামত করতে এক বছরের সময় লাগবে বলে ঘোষণা করলেও, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিন মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন পুনরায় চালু করা হয়েছে। মিরপুর-১০ স্টেশনটিও তিন মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানিয়েছেন, এই স্টেশনটি চালু হলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা থেকে মেট্রোরেলের যাত্রী সেবার পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। তিনি আরও জানান, মেট্রোরেলের হেডওয়ে (দুই ট্রেনের মধ্যে ব্যবধান) ১২ মিনিটের বদলে ১০ মিনিট করা হবে। এতে করে বর্তমানে চালু থাকা ৬০টি ট্রেনের পরিবর্তে ৭২টি ট্রেন চলবে, যা যাত্রীদের জন্য আরো সুবিধাজনক হবে।
মেট্রোরেলের অর্থনৈতিক দিক তুলে ধরে মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, গত আগস্টের শেষ থেকে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আয় হয়েছে ৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অক্টোবরে প্রথম ১৩ দিনে মেট্রোরেলের আয় হয়েছে ১১ কোটি ২২ লাখ টাকা, যদিও এই মাসে কিছু সরকারি ছুটি থাকার কারণে আয় কিছুটা কম হয়েছে। দিনে গড়ে মেট্রোরেল ১ কোটি ২২ লাখ টাকা আয় করছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, ঢাকা শহরে মেট্রোরেলের চাহিদা এবং ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়ছে।
২০২৫ সালের পর মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো চিত্র এবং লাভ-ক্ষতির বিশদ মূল্যায়ন করা যাবে, কারণ তখন মেট্রোরেল পুরোপুরি কমলাপুর পর্যন্ত চালু হয়ে যাবে। সেই সময়ে মেট্রোরেল প্রকল্পের আর্থিক অবস্থান ও প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
মেট্রোরেল ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত এক দশকে ঢাকার যানজট সমস্যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেট্রোরেল এই সমস্যা নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু রয়েছে। মিরপুর-১০ স্টেশনের সাথে যুক্ত হওয়ায় মিরপুর অঞ্চলের বাসিন্দাদের যাতায়াত সহজ হবে। বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী এবং জরুরি সেবার কর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
মেট্রোরেলের আরও স্টেশন চালু হওয়ার সাথে সাথে ঢাকা শহরের সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি বৃহৎ পরিবর্তন আসবে। শহরের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে দ্রুতগতির এবং নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো ও হেডওয়ে কমানোর ফলে যাত্রী সেবার মানও আরও উন্নত হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণ হলে এর কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন চালুর মাধ্যমে ঢাকার যাতায়াতে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। এটি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যই নয়, পুরো ঢাকাবাসীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মেট্রোরেল প্রকল্পের দ্রুত অগ্রগতি এবং সরকারের দৃঢ় উদ্যোগ ঢাকার উন্নয়নে একটি বড় ভূমিকা রাখছে।