শরীরের ঘাম থেকে দুর্গন্ধ হওয়া একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যা। প্রচণ্ড গরম হোক বা শীত, অনেক সময়েই আমরা ঘামের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি। ঘামের দুর্গন্ধের পেছনে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি ছাড়াও বেশ কিছু খাবারেরও ভূমিকা আছে। কিছু খাবার হজমের পর এমন ধরনের রাসায়নিক তৈরি করে, যা আমাদের ঘাম এবং নিঃশ্বাস থেকে অপ্রীতিকর গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। যেসব খাবার ঘামের দুর্গন্ধ বাড়ায়, সেগুলো কমিয়ে অথবা বাদ দিয়ে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রকোলি জাতীয় সবজিগুলো ক্রুসিফেরাস সবজি হিসেবে পরিচিত। এই সবজিগুলোতে সালফার জাতীয় যৌগ থাকে, যা হজমের সময় ভাঙে এবং দুর্গন্ধ তৈরি করে। সালফার, মূলত, একধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যা ঘামের মাধ্যমে নিঃসৃত হয়ে তীব্র গন্ধ সৃষ্টি করে। যদিও এই সবজিগুলো স্বাস্থ্যকর এবং কম ক্যালরির, তবে ঘামের দুর্গন্ধের সমস্যা হলে এগুলো খাওয়ার পরিমাণ কমানো উচিত। বিশেষ করে যাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম নিঃসৃত হয়, তাদের এই সবজিগুলো খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা দরকার।
পেঁয়াজ ও রসুন আমাদের নিত্যদিনের রান্নায় ব্যবহৃত হয়, তবে এগুলোও ঘামের দুর্গন্ধের একটি বড় কারণ হতে পারে। পেঁয়াজ ও রসুনে থাকা ভিন্ন ভিন্ন সালফার যৌগ হজমের সময় ভেঙে নিঃশ্বাস এবং ঘাম থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়ার ফলে এই গন্ধের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সালাদ, শিঙাড়া, ভর্তা, এমনকি বিভিন্ন বিশেষ ভোজেও পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই এই দুটি উপাদান নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত যদি ঘামের দুর্গন্ধ কমাতে চান।
মাছ এবং অন্যান্য সি-ফুডে ট্রাইমিথাইল অ্যামিন নামক একটি যৌগ থাকে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই যৌগটি সঠিকভাবে ভাঙতে না পারায় ট্রাইমিথাইল্যামিনুরিয়া নামক অবস্থা সৃষ্টি হয়, যা শরীরে সঞ্চিত হওয়া গন্ধ ঘামের মাধ্যমে নির্গত হয়। একে সহজভাবে বলতে গেলে, মাছের আঁশটে গন্ধ শরীরের ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। যারা সি-ফুড নিয়মিত খান এবং ঘামের দুর্গন্ধের সমস্যায় ভোগেন, তাদের খাদ্যতালিকায় মাছের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
মরিচ ও জিরা সাধারণত খাবারে সুগন্ধি মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এগুলোতেও সালফার যৌগ থাকে, যা ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে শরীর থেকে তীব্র গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। তবে মরিচ শরীর থেকে ঘাম ঝরিয়ে গরমে শরীর ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। ফলে মরিচ বা জিরা একেবারে বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং ঘামের দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এই মসলাগুলো অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।
গরু বা খাসির মাংসে প্রচুর প্রোটিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা হজমে সময় নেয় এবং অনেক শক্তি খরচ হয়। এসব মাংস হজমের পর প্রোটিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড মিলে এমন কিছু যৌগ তৈরি করে যা ঘামের সঙ্গে মিশে ব্যাকটেরিয়ার বিক্রিয়া ঘটিয়ে তীব্র দুর্গন্ধ তৈরি করে। তাই যারা বেশি ঘামের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের লাল মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে শরীরের ঘামের দুর্গন্ধ কমানোর চেষ্টা করা উচিত। এছাড়াও, লাল মাংস নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেলে কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঘামের দুর্গন্ধ কমাতে করণীয়
এখন পর্যন্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, শরীরের ঘাম এবং দুর্গন্ধ কমানোর জন্য খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। এই পরিবর্তনগুলো কীভাবে করা যায় তার কিছু সাধারণ ধারণা নিম্নে দেওয়া হলো:
১. সালফারযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ
ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, রসুন ও মসলা জাতীয় খাবার কমাতে হবে। এগুলো খেলে ঘামের সঙ্গে সালফারযুক্ত যৌগ বের হয়, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
২. প্রচুর পানি পান
পানি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে এবং ঘামকে পাতলা করে, ফলে ঘামের গন্ধ কম হয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার মাধ্যমে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৩. হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়া
যেসব খাবার সহজে হজম হয় এবং যেগুলোতে বেশি প্রোটিন বা ফ্যাট নেই, সেগুলো খাওয়া উচিত। হালকা সবজি, শস্যজাতীয় খাবার এবং ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী এবং ঘামের গন্ধও কমাতে সাহায্য করে।
৪. প্রোবায়োটিক এবং আঁশযুক্ত খাবার
প্রোবায়োটিক যেমন দই এবং আঁশযুক্ত খাবার শরীরের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এগুলো হজমের সময় কম বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে এবং ঘামের দুর্গন্ধ কমায়।
৫. ক্যাফেইন এবং এলকোহল নিয়ন্ত্রণ
ক্যাফেইন এবং এলকোহল শরীরে পানিশূন্যতা ঘটায় এবং ঘামের গন্ধ বাড়াতে পারে। তাই এই ধরনের পানীয় নিয়ন্ত্রিতভাবে পান করতে হবে।
ঘামের দুর্গন্ধ থেকে নিস্তার পেতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা খুবই কার্যকর হতে পারে। কিছু খাবার শরীরে অতিরিক্ত ঘাম এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে, যার ফলে দৈনন্দিন জীবন