সিটি ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক রুবেল আজিজ সম্প্রতি তার মালিকানাধীন ব্যাংকটির ৩৪ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। আজ, ১৪ অক্টোবর, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে একটি ডিসক্লোজারের মাধ্যমে তিনি এই ঘোষণা প্রদান করেন। এ ঘোষণা অনুযায়ী, রুবেল আজিজ তার বর্তমান শেয়ারসংখ্যা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করতে যাচ্ছেন, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ডিএসই-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রুবেল আজিজের হাতে সিটি ব্যাংকের মোট ৩ কোটি ৮ লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে, তিনি ৩৪ লাখ শেয়ার আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পাবলিক মার্কেটে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। আজকের বাজারমূল্যে, যা ২২.৫০ টাকা ছিল, সেই হিসেবে এই শেয়ার বিক্রির মোট মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা হতে পারে।
রুবেল আজিজের এই সিদ্ধান্ত ব্যাংকটির শেয়ারবাজারে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। বড় পরিসরে শেয়ার বিক্রির ফলে শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে এবং স্বাভাবিকভাবে বাজারে দামেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে সিটি ব্যাংক আর্থিক খাতে বেশ ভালো সাফল্য অর্জন করেছে। ব্যাংকটির নিট মুনাফা ৫ শতাংশ বেড়ে ২৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। ব্যাংকটির এই প্রবৃদ্ধি তাদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করেছে।
ব্যাংকটির প্রকাশিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়কালে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১.৮৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১.৭৬ টাকা। এই বৃদ্ধির ফলে সিটি ব্যাংক তাদের শেয়ারহোল্ডারদের আরও মুনাফা প্রদানের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য সিটি ব্যাংক ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ১০ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব, কারণ তারা নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি অতিরিক্ত শেয়ার পাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই ধরনের ঘোষণা সাধারণত ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়তা করে।
সিটি ব্যাংক গত বছরেও বেশ ভালো আর্থিক ফলাফল প্রদর্শন করেছিল। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৬৩৮ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধি ব্যাংকটির পরিচালন দক্ষতা এবং সুষ্ঠু অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রমাণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
রুবেল আজিজের শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ব্যাংকটি আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের লভ্যাংশ ঘোষণাও বিনিয়োগকারীদের জন্য সন্তোষজনক। তবে, বড় পরিসরে শেয়ার বিক্রি করায় বাজারে সাময়িক প্রভাব পড়তে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে কিছুটা পরিবর্তন করতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় প্রশ্ন হলো, এই শেয়ার বিক্রির পর সিটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম কীভাবে পরিবর্তিত হবে। রুবেল আজিজের মতো একজন পরিচালকের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা সাধারণত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। তবে, সিটি ব্যাংকের সাম্প্রতিক সাফল্য এবং লভ্যাংশ ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
সিটি ব্যাংকের পরিচালক রুবেল আজিজের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা এবং ব্যাংকটির সাম্প্রতিক আর্থিক সাফল্য নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। শেয়ারবাজারে এর প্রভাব কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, ব্যাংকটির লভ্যাংশ ঘোষণা এবং সাম্প্রতিক মুনাফা বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।