গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত শাইনপুকুর সিরামিকস কারখানায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনায় ছয়জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের সবাই গ্যাস সিলিন্ডার রিপেয়ারিংয়ের কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে তাদের চিকিৎসা চলছে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। দগ্ধ শ্রমিকদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. তরিকুল ইসলাম জানান, দগ্ধদের শরীরে ফ্লেম বার্ন ইনজুরি রয়েছে এবং তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। দগ্ধ ছয় জনের মধ্যে রায়হান ও ফারুকের অবস্থা বেশ গুরুতর। রায়হান ৪৪ শতাংশ এবং ফারুক ২১ শতাংশ পুড়ে গেছেন। এ ছাড়া রাহাতের ১৫ শতাংশ, তানভীরের ১৬ শতাংশ, রুপমের ৬ শতাংশ এবং রেজাউলের ২ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়, শাইনপুকুর সিরামিকস কারখানায় গ্যাস সিলিন্ডার রিপেয়ারিংয়ের কাজ চলছিল। হঠাৎ বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগের সময় শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে উপস্থিত ছয়জন শ্রমিক দগ্ধ হন। তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে। এরপর দ্রুত তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
আহত শ্রমিকদের পরিচয়ও জানা গেছে। দগ্ধ রাহাত (৩২) এবং ফারুকের (৫৫) বাড়ি বরিশালে। অন্যদিকে, রায়হান এবং রেজাউলের (৫৫) গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায়। রুপম (৩৩) পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মানিকনগর গ্রামের বাসিন্দা। তানভীরের (৩৭) বাড়ি খুলনার খালিশপুরে। তাদের সবার অবস্থা গুরুতর হলেও চিকিৎসকরা আপাতত তাদের অবজারভেশনে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আহতদের একজন সহকর্মী আল-মামুন জানান, কারখানার ভেতরে গ্যাস সিলিন্ডার রিপেয়ারিংয়ের কাজ চলার সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই আগুন থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। প্রাথমিকভাবে কারখানার অন্যান্য শ্রমিকরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে ফায়ার সার্ভিসকে ডাকা হয়। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়, তবে ততক্ষণে ছয়জন শ্রমিক মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়ে যান।
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বৈদ্যুতিক সার্কিটের ত্রুটির বিষয়ে তদন্ত করবে। কাশিমপুর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত শাইনপুকুর সিরামিকস কারখানার এই দুর্ঘটনা কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বেশ কয়েকজন শ্রমিক দুর্ঘটনার পরপরই কাজ বন্ধ রেখে নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, কারখানার মালিক পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং আহত শ্রমিকদের সবধরনের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কারখানার একজন মুখপাত্র জানান, “আমরা অত্যন্ত দুঃখিত যে এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদের শ্রমিকদের চিকিৎসা খরচের পুরো দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি এবং যত দ্রুত সম্ভব তাদের সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
দগ্ধদের চিকিৎসার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানান, দগ্ধদের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়ায় তাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পুনর্গঠন, ত্বকের প্রতিস্থাপন ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হতে পারে। বিশেষত, রায়হান এবং ফারুকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের চিকিৎসায় আরও সময় লাগতে পারে।
গাজীপুরের এই দুর্ঘটনা কর্মস্থলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অব্যবস্থাপনার একটি উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।