ফলের প্রতি আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের মতো ফলের দাম বৃদ্ধি নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মাসের ব্যবধানে দেশি-বিদেশি অধিকাংশ ফলে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের দাবি, ডলারের উর্ধ্বগতি এবং ভ্যাট-ট্যাক্সের চাপেই এই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।
“প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তারের কাছ থেকে দূরে রাখে”—এই প্রবাদটি এখন যেন কেবল স্মৃতিতেই সীমাবদ্ধ। বাজারে আপেলের দাম বর্তমানে কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু আপেলই নয়, আঙুর, কমলা, মাল্টা, নাশপাতি, এবং আনারসহ অধিকাংশ বিদেশি ফলের দামও বেড়েছে। আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কমলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাল্টা ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, এবং আনার ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।
দেশি ফলের বাজারও ব্যতিক্রম নয়। পেয়ারা, পেঁপে, এবং ড্রাগন ফলের দামও আকাশচুম্বী। ড্রাগন ফলের দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, পেয়ারা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, এবং পেঁপে ১০০ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তরা ফল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ক্রেতাদের ভাষায়, ফল কেনা এখন অনেকটাই স্বপ্নের মতো হয়ে গেছে।
সদরঘাটের বাদামতলী পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরাও জানাচ্ছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং শুল্কের চাপের কারণে ফলের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। পাইকারি বাজারের অবস্থাও খুচরা বাজারের তুলনায় খুব বেশি ভালো নয়।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ফলের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে স্থানীয়ভাবে দেশি-বিদেশি ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বর্তমানে আমাদের কৃষকরা বিদেশি ফল চাষ করছেন, তবে এই চাষাবাদকে আরো সম্প্রসারিত করা জরুরি। উৎপাদন বাড়লে সরবরাহ বাড়বে, যা দাম কমাতে সহায়ক হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য ফল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এতে বাজার কিছুটা হলেও স্থিতিশীল হবে।”
ফলের বাজারে ক্রমবর্ধমান দামের ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়ছে। দীর্ঘমেয়াদে এর সমাধান খুঁজতে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে ফল কিনতে পারে।