কক্সবাজারে শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। বিশাল ভ্রমণপিপাসু মানুষের সমাগমে সৈকত থেকে শুরু করে জেলার সব প্রধান পর্যটন কেন্দ্র মুখরিত হয়ে উঠেছে। কক্সবাজারের হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর এবং পাটুয়ার টেকসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটেও রয়েছে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি। প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে, যাতে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই পর্যটকরা তাদের ছুটি কাটাতে পারেন।
শুক্র ও শনিবার (১১ ও ১২ অক্টোবর) কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল এবং গেস্ট হাউসগুলোতে শতভাগ বুকিং রয়েছে। পর্যটকরা পরিবার নিয়ে ছুটির এই সময়টাতে সমুদ্রের শান্ত স্রোতে সময় কাটাতে আসছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান নিরাপত্তাজনিত সতর্কতা এবং ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করায়, পর্যটকদের একটি বড় অংশ কক্সবাজারের দিকে ঝুঁকেছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আসা পর্যটক শাহরিয়ার, রুমেল ও রুমো জানিয়েছেন, তারা প্রায় ২০ জন বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। তাদের মতে, গরমের সময় সাগরের পানিতে নেমে তারা ক্লান্তি ভুলে গেছেন। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন দিনাজপুর থেকে আসা নাহিদা, সুমি ও ফয়সাল। তারা জানান, দীর্ঘদিন পর কাজের চাপের বাইরে এসে কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে পেরে তাদের বেশ ভালো লাগছে।
কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল এবং গেস্ট হাউসের মধ্যে অর্ধশত স্টার মানের হোটেলে শতভাগ বুকিং রয়েছে। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবারের বুকিং সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ, যা পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য আশার আলো নিয়ে এসেছে। কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মৌখিম খান বলেন, শুক্র ও শনিবারের জন্য সব হোটেল-মোটেল সম্পূর্ণরূপে ভাড়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এবং রবিবারের বুকিং কিছুটা কম হলেও সামগ্রিকভাবে ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ওসান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ‘‘নিয়মিত পর্যটক না থাকলে, ঋণের ওপর প্রতিষ্ঠান চালানো খুব কঠিন হয়ে যায়। গত কয়েক বছর ধরে নানা কারণে পর্যটন মৌসুমেও পর্যটকশূন্য অবস্থা দেখতে হয়েছে। তবে, এবারের ছুটিতে প্রায় ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছি।’’ তার মতে, ২০ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেলের রুম বুকিং আছে ৮০-৮৫ শতাংশ। তারা পর্যটকদের জন্য বিশেষ ইলিশ উৎসবের আয়োজনও করেছেন, যা ভোজনরসিকদের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কাজ করছে।
কক্সবাজার রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম জানান, গত কয়েক বছর পর্যটন মন্দার কারণে অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। তবে, এবারে পর্যটকদের আগমনে সাড়ে তিন শতাধিক রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছে এবং ভালো ব্যবসা আশা করছেন তারা। রাশেদুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন পরে রেস্টুরেন্টগুলো পুরোদমে ব্যবসা করতে পারছে। আশা করছি, এবার থেকে পর্যটন খাত পুনরায় সচল হবে।”
কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিশেষভাবে কাজ করছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রেজিয়নের পুলিশ সুপার আল আসাদ মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম জানান, তারা আইটির মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন এবং সৈকতের আশেপাশে টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ দ্রুত সমাধান করার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পূজার টানা ছুটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ পর্যটন সেল কাজ করছে। প্রশাসন পর্যটকদের যেকোনো ধরনের হয়রানি থেকে রক্ষা করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা রেখেছে। পর্যটকদের যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য কর্মকর্তাদের নিয়োজিত করা হয়েছে।
কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ মন্দার পর এবার আশাবাদী। তারা মনে করছেন, এবারের চার দিনের ছুটিতে পর্যটকদের আগমনের ফলে তারা তাদের অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘‘আল্লাহর রহমতে এবার ব্যবসা ভালো হবে। আমরা সবাই ভালো বুকিং পেয়েছি। আশা করছি, পর্যটন খাতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি আসবে।’’
কক্সবাজারের পর্যটন খাত যেভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে ধরা যেতে পারে। চার দিনের ছুটিতে পর্যটকদের ব্যাপক আগমন কেবল কক্সবাজারের নয়, বাংলাদেশের পর্যটন খাতকেও আরও এক ধাপ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।