বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সরকার পতন এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। প্রধানত, শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন তিনি ক্ষমতার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে আছেন, যা কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তাকে ভুল প্রমাণ করেছেন।
বিবিসির একটি প্রতিবেদনে শিরোনাম ছিল, “শেখ হাসিনার আচমকা দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত।” এতে বলা হয়, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন সরকারকে বিক্ষোভকারীরা মেনে নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরদিনই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “বাংলাদেশের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সরকার মেনে নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা ছাত্রদের।” এতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং জানিয়েছেন, সামরিক নেতৃত্বের কোনো সরকার তারা মেনে নেবেন না।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা অল্প নোটিশে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার লন্ডন যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন এবং শেখ হাসিনা এখনও ভারতে অবস্থান করছেন।
এএফপি জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর পতনের পর মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া।”
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “কে এই ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চাচ্ছেন বাংলাদেশের বিক্ষোভকারীরা?” গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরদিনই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে জেন-জির বিপ্লবে একজন বর্ষীয়ান নেত্রী উৎখাত হয়েছেন।” এতে বলা হয়েছে, প্রধানত ছাত্র-তরুণের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “যেভাবে জেন-জিরা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা একজন স্বৈরশাসককে পরাস্ত করল।” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন ক্ষমতা তরুণ বাংলাদেশিদের হাতে, এবং তাদের কাজ হবে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্য দূর করা।
এই সমস্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের প্রতি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে, যা দেশটির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।