যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার দিকে তীব্র শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসছে ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড় হ্যারিকেন মিল্টন। সোমবার (৭ অক্টোবর) এই ঝড়টি ক্যাটাগরি-৪ হ্যারিকেনে রূপ নেয়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যারিকেন মিল্টন ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানবে এবং সেখানে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
বিশেষ করে ফ্লোরিডার টেম্পা বে অঞ্চলে মিল্টনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়টি যখন উপকূলে আছড়ে পড়বে, তখন জলোচ্ছ্বাস, প্রবল বাতাস ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ব্যাপক বন্যা দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্কতা মেনে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফ্লোরিডার টেম্পা বে-র জাতীয় আবহাওয়া সার্ভিস জানিয়েছে, “ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলের জন্য মিল্টন হবে একটি ঐতিহাসিক হ্যারিকেন।” স্থানীয় সময় বুধবারের মধ্যেই ঝড়টি সেখানে আঘাত হানতে পারে। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, ঝড়ের প্রভাব শুরু হওয়ার আগেই তারা যেন নিরাপদ স্থানে সরে যান এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করেন।
সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যে ঝড়ের ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করেছেন। অনেকেই গাড়ির জ্বালানি ভরে রাখছেন, খাবার, পানি, এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রী কিনে রাখছেন। দোকানপাট ও জ্বালানির স্টেশনগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ছে, কারণ সবাই নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাইছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ওয়েদার.কম জানিয়েছে, মেক্সিকো উপসাগরে তৈরি হওয়া এই ঝড়টি ফ্লোরিডার পশ্চিমাঞ্চলীয় গালফ উপকূলে আঘাত হানবে। ঝড়ের প্রভাবে ৮ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে, যা নিচু এলাকায় ভয়াবহ বন্যার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বাড়িঘর এবং অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কিছু কিছু এলাকায় বাতাসের গতি ১৫০ মাইল প্রতি ঘণ্টা ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা বড় ধরনের গাছপালা উপড়ে ফেলতে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে।
জাতীয় আবহাওয়া সার্ভিসের তথ্যমতে, হ্যারিকেন মিল্টনের কারণে শুধু জলোচ্ছ্বাসই নয়, প্রবল বৃষ্টির কারণে ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। গালফ উপকূলের নিচু অঞ্চলগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। মানুষজনকে আবহাওয়া পূর্বাভাসে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
মাত্র গত সপ্তাহেই হ্যারিকেন হেলেনের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে। ওই ঝড়ে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য হয়। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২২৬ জন। হেলেনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষ পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে না পারার আগেই হ্যারিকেন মিল্টন আরও একটি বড় বিপদ হিসেবে ধেয়ে আসছে।
হ্যারিকেন হেলেনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনও উদ্ধারকাজ ও পুনর্বাসনের কাজ চলছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া শেষ হবার আগেই নতুন এই হ্যারিকেনের কারণে আবারও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ফ্লোরিডার সাধারণ মানুষ এই মুহূর্তে হ্যারিকেন মিল্টনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত।
ফ্লোরিডার জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (FEMA) জানিয়েছে, তারা হ্যারিকেন মিল্টনের প্রভাব মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত। স্থানীয় ও রাজ্য সরকার একত্রে কাজ করছে যাতে জনগণকে যথাসময়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায়। স্কুল, হাসপাতাল, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাঘাত হতে পারে এবং বেশ কিছুদিনের জন্য জনজীবন স্থবির হয়ে পড়তে পারে। তাই মানুষকে পর্যাপ্ত খাবার, পানি এবং ঔষধ মজুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিছিন্নতার সময় যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য অনেকেই সোলার ব্যাটারি বা জেনারেটর ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এখন পর্যন্ত ঝড়ের গতিপথ স্পষ্টভাবে জানা যায়নি, তবে ফ্লোরিডার পাশাপাশি মিসিসিপি, আলাবামা এবং লুইজিয়ানা অঞ্চলেও ঝড়ের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলগুলোর মানুষকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং ঝড়ের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করা হবে।
হ্যারিকেন মিল্টনের আগমন ফ্লোরিডার মানুষকে নতুন করে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে। ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে এই ঝড়টি ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পূর্বাভাস এবং প্রস্তুতি কাজ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলা কিছুটা সহজ হতে পারে।