২০২৫ সালের বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে আম্মানের The Royal Islamic Strategic Studies Centre। প্রতিবারের মতো এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ‘The Muslim 500: The World’s 500 Most Influential Muslims’ শিরোনামে। ২০০৯ সালে প্রথমবার প্রকাশিত হওয়া এই তালিকা ইতোমধ্যে ১৬তম সংস্করণে পৌঁছেছে। বিশ্বের ২.১ বিলিয়নেরও বেশি মুসলিমদের মধ্যে যাদের প্রভাব ও অবদান গুরুত্বপূর্ণ, তাদেরকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দ্য মুসলিম ৫০০ তালিকার মূল লক্ষ্য হলো মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া। এই প্রভাব শুধু ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয় বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিমদের ভূমিকা উঠে আসে। এতে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব ফেলতে সক্ষম ব্যক্তিদের বাছাই করা হয় যারা ইসলামিক মূল্যবোধ প্রচারে, মানবকল্যাণে, এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
দ্য মুসলিম ৫০০ তালিকাটি মূলত পাঁচটি প্রধান ক্যাটাগরিতে বিভক্ত:
ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব: ইসলাম প্রচার ও শাসনে প্রভাবশালী আলেম ও ধর্মীয় নেতারা।
রাজনৈতিক নেতা: মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ ও শাসক যাদের বিশ্বব্যাপী প্রভাব রয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের উন্নয়নে অবদান রাখা মুসলিম বিজ্ঞানী।
শিল্প ও সংস্কৃতি: শিল্প ও সংস্কৃতিতে সমাজে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিত্ব।
ক্রীড়া ও বিনোদন: ক্রীড়াবিদ ও বিনোদন জগতের তারকা যারা মুসলিম সমাজে বিশাল প্রভাব বিস্তার করছেন।
বিশ্বের ৫০ জন শীর্ষ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন ক্যাটাগরির ব্যক্তিত্ব, যেমন শাসক, রাজনীতিবিদ, আলেম, এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন:
1. জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ইবন আল-হুসেইন
2. কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি
3. ইরানের আয়াতুল্লাহ হাজ্জি সাইয়্যিদ আলি খামেনেয়ী
4. সৌদি আরবের রাজা সালমান বিন আবদুল-আজিজ আল-সৌদ
5. সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান
6. তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান
7. মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম
8. মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সিসি
9. তুরস্কের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ড. ইব্রাহিম কালিন
10. বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস
২০২৫ সালের তালিকায় উল্লেখযোগ্য নারী নেতৃত্বের স্থান দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে, Woman of the Year নির্বাচিত হয়েছেন জর্ডানের রানী রানিয়া আল-আবদুল্লাহ। রানিয়া আল-আবদুল্লাহ জর্ডানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে মানবিক ও সামাজিক উদ্যোগের জন্য।
এবারের তালিকায় বিশিষ্ট পুরুষ হিসেবে আলোচনায় এসেছেন ঘাসসান সুলাইমান আবু-সিত্তাহ। তিনি একজন ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি প্লাস্টিক সার্জন, যিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য সুপরিচিত। তার চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরাক, লেবানন, সিরিয়া, এবং বিশেষ করে গাজা উপত্যকা। তিনি একাধিকবার সেখানে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-তে গাজায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
২০২৫ সালের সংস্করণে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং কৃতিত্ব আলোকপাত করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে:
গাজায় চলমান গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের পরিস্থিতি।
প্যারিস অলিম্পিকে মুসলিম ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ এবং কৃতিত্ব।
মুসলিম বিশ্বের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ঘটনার পর্যালোচনা।
এই তালিকায় ৪৫০ জন প্রভাবশালী মুসলিমের পাশাপাশি বেশ কিছু বিশেষ উল্লেখও রয়েছে, যারা হয়তো সরাসরি তালিকার শীর্ষে নেই, কিন্তু তাদের অবদান ছোট হলেও সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে এ তালিকা প্রমাণ করে যে মুসলিমরা শুধু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নয়, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রেও বিশাল অবদান রেখে চলেছেন। এটি শুধু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং বৈশ্বিকভাবে মুসলিমদের প্রভাবকে তুলে ধরে, যারা মানবতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
এই তালিকা প্রতিবছর নতুন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের অবদান ও ভূমিকা স্বীকৃতি দিতে প্রকাশিত হয়, যা মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থা এবং তার ভবিষ্যতের নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে।