বরগুনা, ৫ অক্টোবর ২০২৪: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরগুনার পাথরঘাটার লিকারপট্টি এলাকায় শুক্রবার রাতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি ও অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিয়নের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা দ্বন্দ্বের জের ধরে এই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদলের বরগুনা উপজেলা ইউনিটের আহ্বায়ক মামুন আহমেদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুল্লাহ তাদের সমর্থকদের নিয়ে পাথরঘাটার লিকারপট্টি এলাকায় শুক্রবার রাতে অবস্থান করছিলেন। এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হলে তা এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষই লাঠিসোটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এক পক্ষের আধিপত্য বিস্তার এবং প্রভাব খাটানোর চেষ্টা অন্য পক্ষ মেনে নিতে পারছিল না, যার ফলাফল হলো এই সংঘর্ষ।”
সংঘর্ষের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পুলিশ সদস্যরা উভয় পক্ষকে শান্ত করার পাশাপাশি তাদেরকে এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে এলাকাজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে ঘর থেকে বের হননি এবং দোকানপাটও বন্ধ ছিল।
পাথরঘাটা থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম ঘটনার বিষয়ে বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তারা উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক করেন।
এক বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা চাই না দলের ভেতরে কোনো ধরনের বিভেদ তৈরি হোক। এই ধরনের সংঘর্ষ দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। দুই পক্ষকেই আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নুরুল ইসলাম মনি ও অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিয়নের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এই দ্বন্দ্ব ছাত্রদল পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং এক পর্যায়ে তা হাতাহাতি ও সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। উভয় পক্ষই বরগুনায় তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, যা এই সংঘর্ষের মূল কারণ।
স্থানীয় রাজনীতির উপর আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে এমন সহিংসতা দেখা গেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। তারা বলছেন, “এ ধরনের সহিংসতা দলের ভেতরকার বিভাজনকে আরো তীব্র করে তোলে, যা দলের সমন্বিত কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।”
ঘটনার সময় স্থানীয়রা বেশ আতঙ্কিত ছিলেন। এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল এবং দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা খুবই আতঙ্কিত। এ ধরনের ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে হয়নি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই, কিন্তু রাজনীতির দ্বন্দ্ব আমাদের এলাকাকে অস্থির করে তুলছে।”
এ ঘটনার পর বরগুনা এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে এবং যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলেছে, তারা এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে তৎপর রয়েছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের এই ঘটনাটি বরগুনার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অস্থিরতা তৈরি করেছে। তবে পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং বিএনপির স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে দলীয় ঐক্য এবং সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্টরা শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান করে বরগুনার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন।