বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তার অবসর নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে, যেহেতু ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। ভারত-বাংলাদেশ তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি মাহমুদউল্লাহর অবসর প্রসঙ্গে নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন।
নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছেন, মাহমুদউল্লাহর জন্য এই সিরিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমি যতটুকু বুঝতে পারি, রিয়াদ ভাইয়ের এই সিরিজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হয়ত নির্বাচকদের সঙ্গে কথাও বলবেন। আমি খুব একটা ক্লিয়ার না। অবশ্যই নির্বাচক ও বোর্ডের সাথে যোগাযোগ হবে।” এ বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মাহমুদউল্লাহর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি, তবে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে ইতোমধ্যেই তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন। সাকিব আল হাসানও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বর্তমানে শুধু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই আছেন যারা অভিজ্ঞ ও সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে এখনও টি-টোয়েন্টিতে খেলছেন। তবে তারও ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।
গুঞ্জন রয়েছে, মাহমুদউল্লাহ দলে থাকায় তরুণ ব্যাটসম্যান শামীম হোসেন পাটোয়ারির সুযোগ পেতে বিলম্ব হচ্ছে। শামীম অস্ট্রেলিয়ায় বিসিবির হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের (এইচপি) হয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন এবং মিরপুরে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি ম্যাচেও আলো ছড়িয়েছেন। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারেননি এবং প্রস্তুতি ম্যাচেও রান পাননি। কিন্তু এ নিয়ে তুলনা করতে রাজি নন অধিনায়ক শান্ত।
তিনি বলেন, “ভাই কার সাথে কার তুলনা করছেন? রিয়াদ ভাই এত বছর ধরে বাংলাদেশ দলকে সার্ভিস দিচ্ছেন, ভালো করেছেন, অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। হ্যাঁ অনেক ম্যাচ হয়ত শেষ করে আসতে পারেননি। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক ম্যাচ জেতার পেছনে উনার অনেক অবদান আছে। শামীম তরুণ, খুবই ভালো করছে। কিন্তু এই জায়গায় এখনই তুলনায় যেতে চাই না। শামীম যখনই সুযোগ পাবে বাংলাদেশ দলকে ভালোভাবে সার্ভিস দিবে।”
মাহমুদউল্লাহর অবদানকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন শান্ত। তার মতে, অতীতের অবদানের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে মূল্যায়ন করা উচিত। তাই এক বা দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে তার পুরো ক্যারিয়ারের মূল্যায়ন করা যায় না। তবে তরুণ খেলোয়াড় শামীমের প্রতিভার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন এবং মনে করেন, শামীম যখনই সুযোগ পাবেন, তিনি বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো কিছু করে দেখাবেন।
মাহমুদউল্লাহ ইতোমধ্যেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটকেও বিদায় জানাবেন। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তার অবসর নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। ভারতের বিপক্ষে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাকে নিয়ে দল ও বোর্ডের মধ্যে যে আলোচনা হচ্ছে, তাতে তার অবসর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আগামী ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া ভারত-বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজটি তাই মাহমুদউল্লাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এই সিরিজের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই হয়তো তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায় নির্ধারণ হবে।
সমগ্র ক্রিকেট মহল এখন অপেক্ষা করছে, মাহমুদউল্লাহ তার অবসর নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেন এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের শেষটা কেমন হয়।