ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চলতি মাসেই পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন। মূলত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে এই সফর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এসসিও সম্মেলনটি একটি বহুপাক্ষিক বৈঠক, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়। এসসিও’র লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো। ভারত এবং পাকিস্তান, উভয় দেশই এই সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই জটিল এবং সংকটপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ, কাশ্মীর ইস্যু, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সম্পর্ক প্রায়ই উত্তপ্ত থাকে। তবে, এসসিও সম্মেলনে যোগ দেওয়ার মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে তারা একসঙ্গে বসে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে। এ ধরনের বৈঠকগুলো দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এসসিও সম্মেলনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ, ভারত এবং পাকিস্তান। দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই ধরনের বৈঠকে অংশগ্রহণ করলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে সমাধানের পথে অগ্রগতি সম্ভব হতে পারে। তবে, এর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে পুরনো দ্বন্দ্ব এবং অবিশ্বাসের বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।
এসসিও সম্মেলনটি শুধুমাত্র আঞ্চলিক স্তরে নয়, বৈশ্বিক স্তরেও গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে চীন, রাশিয়া, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, এবং তাজিকিস্তানের মতো বড় রাষ্ট্রও রয়েছে। সম্মেলনের আলোচনার মূল বিষয়গুলো হবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টা। এর পাশাপাশি, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সহযোগিতা এবং একে অপরের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এসসিও’র মতো মঞ্চে ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ সবসময়ই আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক সত্ত্বেও তারা এই ধরনের বৈঠকে একত্রে বসে আলোচনা করে। এটি শুধু কূটনৈতিক পর্যায়ে নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও একটি বার্তা পৌঁছে দেয় যে, আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নয়ন সম্ভব।
তবে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান সম্পর্কের পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এই সম্মেলনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যা তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশেষ করে, ২০১৯ সালে ভারতের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তীব্রভাবে অবনতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এস জয়শঙ্করের পাকিস্তান সফর কূটনৈতিক স্তরে কিছুটা হলেও নতুন আলোচনার পথ খুলতে পারে।
এবারের এসসিও সম্মেলন থেকে দু’দেশের মধ্যে নতুন কোন ইতিবাচক বার্তা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন রাতারাতি সম্ভব নয়, তবুও এসসিও’র মতো সম্মেলনে অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
এস জয়শঙ্করের এই সফর শুধু ভারতের জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।