মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে তেহেরানে ইরানের তেল স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বাইডেন এই মন্তব্য করেন, যখন ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়, যা তৎক্ষণাৎ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা তৈরি করে। এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা বাইডেনের কাছে জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ইরানের তেল স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানার জন্য সমর্থন দেবে কিনা। বাইডেন উত্তরে বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে তবে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ঘটছে না।
বাইডেনের এই মন্তব্য বিশ্ববাজারে তেলের দামে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। জ্বালানি খাতে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বাইডেনের মন্তব্যের পর সম্ভাব্য উত্তেজনার কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় পড়ে যান।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, কারণ ইরান তেলের অন্যতম প্রধান উৎপাদক দেশ এবং তাদের তেল স্থাপনায় হামলার ফলে সরবরাহে বিশাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত কেবলমাত্র তেলের উপর নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইসরায়েল বরাবরই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
ইসরায়েলের জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড্যানি ডেনন জানান, ইরানের হামলার জবাবে তার দেশের হাতে আরও অনেক বিকল্প রয়েছে এবং ইসরায়েল শিগগিরই সেই পদক্ষেপ নেবে। ডেনন সিএনএনকে বলেন, “ইসরায়েল নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম এবং আমরা খুব দ্রুতই তা দেখাব।”
যদিও বাইডেন ইরানের তেল স্থাপনাগুলোতে হামলার বিষয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছেন, তিনি পরিষ্কার করেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে তিনি ইসরায়েলকে সমর্থন দেবেন না। বাইডেনের এই বক্তব্য ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান পারমাণবিক উত্তেজনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা নির্দেশ করছে।
তবে, বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েল কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, সে সম্পর্কে ওয়াশিংটন কিছুই জানে না। এর ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক সমন্বয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই নতুন উত্তেজনা কেবল ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশ, যেমন সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরানের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং সামরিক উত্তেজনার কারণে এই পরিস্থিতির উপর গভীর নজর রাখছে। তেলের বাজারে সামান্য অসুবিধা তাদের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও এই সম্ভাব্য সংঘাতের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে এবং কোনো সামরিক সংঘাত তাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাম্প্রতিক মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। যদিও ইরানের তেল স্থাপনাগুলিতে হামলার বিষয়ে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, তবে বাইডেন এবং ইসরায়েলের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলার খবরেই বৈশ্বিক তেলের বাজারে প্রভাব পড়েছে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে এই উত্তেজনা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের স্থিতিশীলতা এবং জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।