শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি, এবং বিতর্কিত কর্মকর্তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। এসব মন্ত্রী এবং এমপিরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখানে বিজেপি সরকারের ছত্রছায়ায় অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গত ১৫ বছরে ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করেছেন, তা তাদের পালিয়ে যেতে সহায়ক হয়েছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-মন্ত্রী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। জানা গেছে, এদের মধ্যে অনেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়েছেন। কেউ কেউ দল বেঁধে বাসা নিয়ে বসবাস করছেন, আবার কেউ হোটেলে অবস্থান করছেন।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া এসব আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং এমপিরা বিজেপি সরকারের তত্ত্বাবধানে নিরাপদে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে, তবুও মোদি সরকার এসব ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে উদ্যোগী হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপিদের ভারতে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতেও দেখা যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে কলকাতার বিভিন্ন পার্কে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে ছিলেন সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল, এবং হাজী সেলিমের ছেলে সোলাইমান সেলিম। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এমপি শামীম ওসমানকে ভারতে দেখা গেছে। শামীম ওসমানকে দিল্লির নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় ঘুরতে দেখা যায়।
গত আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। পুলিশ বিভাগের সাবেক বিতর্কিত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারও পালিয়ে গেছেন।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া এসব নেতারা সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। ভারতের মন্ত্রী-সাংসদরা বাংলাদেশের এ ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে নীরবতা পালন করলেও বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নিরাপত্তা চুক্তির আলোকে তাদের গ্রেপ্তার এবং দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠেছে।
দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এসব আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে গিয়ে বিশাল অর্থবিত্তের মালিকানা দাবি করছেন। তারা ভারতজুড়ে সম্পদশালী জীবনযাপন করছেন। তাদের কেউ কেউ ভারতে নিজেরা আলাদা বাসা বা হোটেল ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন এবং পার্কে সকাল-বিকেল ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ পর্যটকরা অনেক সময় তাদেরকে চিনতে পেরেছেন এবং এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মোদি সরকার এখন পর্যন্ত পালিয়ে আসা এসব নেতাদের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বাংলাদেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক মহল থেকে চাপ বাড়ছে তাদের ফেরত আনার জন্য। দুদেশের মধ্যে যে বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে তার আওতায় তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠেছে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং দেশের জনগণ পালিয়ে যাওয়া এসব নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।