ঢাকা: নাসা গ্রুপ ও বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার মঙ্গলবার রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছেন। একসময়ের ক্ষমতাধর এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে মজুমদার ব্যাংক খাতের অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
সূত্র মতে, ২০১৭ সালের পর থেকে ব্যাংকিং সেক্টরে নজরুল ইসলাম মজুমদার তার একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেন। এই সময় তার বড় ছেলে ওয়ালিদ ইবনে ইসলামের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ভায়রার মেয়ের বিয়ে হয়, যা তাকে শেখ হাসিনার পরিবারে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলে। এরপর থেকে তিনি শেখ হাসিনাকে বোন (বেয়াইন) বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন।
মজুমদারের ক্ষমতা বৃদ্ধির পেছনে তার রাজনৈতিক সংযোগ ও প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদ ভূমিকা রেখেছে। এসবের ফলে তিনি বাংলাদেশ ছাড়াও লন্ডন, হংকং, এবং দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুবাইতে রিয়েল এস্টেট খাতে তার একাধিক বিনিয়োগ রয়েছে এবং সৌদি আরবে কৃষি খাতেও তার অংশীদারিত্ব রয়েছে।
এছাড়া, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানিয়েছে যে, মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে তিনি তার সম্পদ পাচার করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
মজুমদারের নাসা গ্রুপের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগগুলিকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। একসময় তার কোম্পানির ২০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার আলতাফ হোসেনকে বেআইনিভাবে বের করে দেওয়ার পর, আলতাফ আইনি লড়াই শুরু করেন এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরে মজুমদারের অনিয়মের বিরুদ্ধে চিঠি দেন।
অর্থনৈতিক খাতের উপর মজুমদারের প্রভাব এবং তার বিপুল সম্পদের খবর গণমাধ্যম ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরে আসে, যা অবশেষে তাকে গ্রেফতারের দিকে নিয়ে যায়।