বাংলাদেশে গত সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোর তুলনায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তির আভাস দিচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) অনুসারে, আগস্টে যেখানে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে তা নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। এ হিসাব অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ কমেছে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির হ্রাস
খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতিতে বিশেষভাবে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে। আগস্টে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে। এই হ্রাস পাওয়া খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রভাব সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। খাদ্যদ্রব্যের দাম কমায় বাজারে পণ্যের সহজলভ্যতা এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ।
খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি
খাদ্যবহির্ভূত খাতেও কিছুটা মূল্যস্ফীতি হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। আগস্টে খাদ্যবহির্ভূত খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে কমে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নেমেছে। এই খাতের মূল্যস্ফীতিতে হ্রাস পাওয়া মানে জীবনযাত্রার ব্যয় কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি, গৃহস্থালি পণ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে।
মূল্যস্ফীতির সার্বিক প্রভাব
সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমার ফলে জাতীয় পর্যায়ে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। মূল্যস্ফীতির হার কমলেও দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেও অন্যান্য খাতে বিশেষ করে আমদানি নির্ভর পণ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ এখনও বিদ্যমান। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এখনও দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী রয়ে গেছে।
ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সরকারকে উৎপাদন খাতে আরও মনোযোগ দিতে হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শিল্প উৎপাদনে উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হলে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে। এ ছাড়াও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদনে জোর দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হবে।
সরকারী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা
সরকার ইতোমধ্যেই খাদ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। টিসিবির মাধ্যমে খাদ্যপণ্য সরবরাহ বাড়ানো, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভর্তুকি প্রদান, এবং বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়ক হবে। একইসঙ্গে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঠিক নীতি এবং পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে এবং সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য আগামী কয়েক মাসে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
উপসংহার
সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে আসায় জাতীয় অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছে, তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেও অন্যান্য খাতে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।