সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমদ ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদ এবং দুর্নীতির বিস্ফোরক তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রমতে, আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলা থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে রক্ষা করার আশ্বাস দিয়ে বেনজীর আহমদ ৫০ কোটি টাকা ঘুস নিয়েছিলেন। প্রদীপ এই অর্থ প্রদান করেছিলেন একজন পুলিশ সুপারের মাধ্যমে। এই ঘটনায় সম্পৃক্ত আরও কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বেনজীর আহমদ টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপের সঙ্গে ক্রসফায়ার বাণিজ্যে যুক্ত ছিলেন। প্রদীপের বিরুদ্ধে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে থেকে বেনজীর এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল মোটা অঙ্কের ঘুস নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে একাধিক সূত্র।
সিনহা হত্যাকাণ্ড ও বেনজীরের ভূমিকা
২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশ চেকপোস্টে গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনার মূল আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির রায় হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রদীপকে ফাঁসি থেকে রক্ষা করার আশ্বাস দিয়ে বেনজীর আহমদ ৫০ কোটি টাকা ঘুস নিয়েছিলেন। প্রদীপের ঘনিষ্ঠ একজন পুলিশ সুপারের মাধ্যমে এই লেনদেন হয় বলে সূত্র জানায়।
টিআইবি’র প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বেনজীর আহমদ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন। তিনি র্যাব ও পুলিশ উভয় বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ফলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বদলে তিনি নিজেই অপরাধ সংগঠিত করেছেন।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, বেনজীরের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঠিক বিচার না হলে আরও অনেক বেনজীর তৈরি হবে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য বিপজ্জনক।
দুদকের অনুসন্ধান: বেনজীরের বিপুল সম্পদ
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেনজীর আহমদের বিপুল সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ও তার পরিবার মিলে বিভিন্ন জেলায় ৭৮৬ একর জমি এবং অন্যান্য সম্পত্তি অর্জন করেছেন। এসব সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, খামার ও রিসোর্ট। তার বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, বান্দরবান, কক্সবাজারসহ দেশের আরও বিভিন্ন স্থানে।
এই অভিযোগের বিষয়ে বেনজীর আহমদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি, কারণ তিনি আত্মগোপনে আছেন এবং তার ব্যবহৃত ফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলি দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দেশের পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে।