গত কয়েক সপ্তাহে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষিতে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। সরকারের পতনের পর থেকেই সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য (এমপি), বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে গোপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রমতে, দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছেন পালিয়ে যাওয়া প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, ২০ লাখ টাকার নিচে কেউই ভারতে ঢুকতে পারেননি। কারও কারও ক্ষেত্রে সীমান্ত পাড়ি দিতে কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়েছে। এর পাশাপাশি, কিছু নেতাকর্মী দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।
দেশত্যাগের জন্য সাবেক মন্ত্রী ও অন্যান্য প্রভাবশালীরা প্রধানত যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, সিলেট, এবং পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করেছেন। বিশেষত যশোর ও বেনাপোল সীমান্তের মাধ্যমে পালানোর চেষ্টার সংখ্যা বেশি। তবে বেনাপোল ছাড়াও পুটখালী সীমান্ত দিয়ে অনেক নেতাই পালিয়েছেন।
দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৫ আগস্ট মধ্যরাতে যশোর সীমান্তে পৌঁছান। তার জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়, এবং পরদিন তিনি বিশেষ নিরাপত্তায় সীমান্ত পার হন। যশোর ও বেনাপোলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে, তবে তারা পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন।
ভারতের সীমান্তের দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পালানোর এই প্রচেষ্টায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছেন নেতা-কর্মীরা। অনেকের ক্ষেত্রে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না ভারতীয় অংশে ঢোকার চেষ্টা করার সময় নিহত হন। তার লাশ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ উদ্ধার করে। এমন ঘটনা আরও বাড়তে থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসী অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। অপরিচিত কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
সীমান্তে যাত্রীদের তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে, এবং বিজিবি প্রতিটি বর্ডার পয়েন্টে অতিরিক্ত নজরদারি করছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীও তাদের অঞ্চলে অবৈধভাবে ঢোকার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এসব অঞ্চল থেকে প্রভাবশালী নেতাদের পালানোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ প্রভাবশালী নেতাকর্মী এখন জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে দেশের ভেতরে ও বাইরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের আস্থা ফিরে পেতে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
এই পরিস্থিতিতে, দালালদের সহায়তায় নেতাদের দেশত্যাগ ও সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার প্রচেষ্টা জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করতে নতুন সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।