ঢাকার সাভারে রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি অস্বাভাবিক হামলার ঘটনা ঘটে, যেখানে সুফি সাধক কাজী জাবেরের বাড়ি এবং তার পরিবারের ওপর আক্রমণ করা হয়। সাভার উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের চাকুলিয়া এলাকায় এই হামলার ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা মাওলানা কাজী আফসার উদ্দিনের মাজার ও বাড়ির ওপর হামলার সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হামলাকারীরা ইট-পাটকেল ছোড়া, লাঠিসোটা ব্যবহার, এবং আগুন দেওয়ার মতো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়।
হামলার আগে থেকেই ফেসবুক লাইভে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ‘কাজী জাবের আহমেদ’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একাধিক ফেসবুক লাইভ করে হামলার বিবরণ তুলে ধরা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত একটি দল কাজী জাবেরের বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে এবং তাকে বাইরে বের হতে বলছে। কাজী জাবের, নিরাপত্তার কারণে, গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন আক্রমণকারীরা বাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করে। ভিডিওতে নারীদের চিৎকার এবং আতঙ্কের চিত্র স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছিল।
কাজী জাবের আহমেদ ভিডিওর বিবরণে দাবি করেন, চাকুলিয়া মসজিদের ইমাম তৈয়ব খান এই হামলার প্রধান উসকানিদাতা। তার মতে, ইমামের নেতৃত্বে লোকজনকে উত্তেজিত করে এই আক্রমণটি সংঘটিত হয়। কাজী জাবের আরও উল্লেখ করেন যে, তিনি সুরেশ্বর দরবার শরীফের অনুসারী এবং সম্ভবত এই মতবিরোধই হামলার মূল কারণ।
ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর কবির জানান, “আমরা ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছেছি। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তারা ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে, তবে ততক্ষণে বাড়িটি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছিল এবং উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল।
এদিকে, ফেসবুকে লাইভে থাকা লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সহায়তার অনুরোধ জানান। একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, মাজারের আশেপাশের লোকজন আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু আক্রমণকারীরা শক্তিশালী দল হিসেবে তাদের ওপর হামলা চালাতে থাকে।
এই হামলার পেছনে মূলত মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাজী জাবের আহমেদ সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীরের অনুসারী, যা একটি বিশেষ সুফি মতবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে, হামলাকারীদের পরিচিতি নিয়ে ধারণা করা হচ্ছে যে, তারা মসজিদের ইমাম তৈয়ব খানের নেতৃত্বে উগ্রপন্থী ইসলামি মতাদর্শে বিশ্বাসী হতে পারে।
অনেক সময় সুফি ধারার সঙ্গে উগ্রপন্থী মতাদর্শের মধ্যে মতাদর্শগত সংঘাত সৃষ্টি হয়। এই দ্বন্দ্ব মূলত ইসলামি বিশ্বাসের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা থেকে উদ্ভূত হয়। সুফিবাদ যেখানে একটি শান্তিপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে, সেখানে উগ্র মতবাদ অনুসারীরা একে ‘বেদআত’ বা নবপ্রবর্তিত আমল হিসেবে দেখে, যা তাদের মাঝে সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতা জন্ম দিতে পারে।
এমন একটি হামলার ঘটনা সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা বেশ ক্ষুব্ধ এবং আতঙ্কিত। তারা মনে করছেন যে, ধর্মীয় মতবিরোধের কারণে সৃষ্ট এমন সহিংসতা তাদের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য হুমকি। হামলার সময়কার ভিডিওতে নারীদের আতঙ্কিত চিৎকার শোনা গেছে, যা পুরো পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রকাশ করে।
সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দারা এই ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হামলার পর কাজী জাবেরের পরিবারের সদস্যরা শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে, যদিও তাদের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।
পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, তবে এখনও পুরোপুরি তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত অপরাধীদের চিহ্নিত করা কঠিন। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে যায় এবং বর্তমানে তদন্ত চলছে। যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে প্রশাসন থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সাভারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর কবির বলেছেন, “আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং আমাদের সব বাহিনী সতর্ক রয়েছে।”
এই হামলার ঘটনায় প্রশাসন বেশ তৎপর এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাজার ও আশেপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যাতে আরও কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে।
সাভারের মাজার ও পীরের বাড়িতে হামলার ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন সহিংসতা নয়, বরং এটি ধর্মীয় মতবিরোধ থ