ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি তাদের ক্যাম্পাসে টিউশন ফি কমানো এবং গবেষণা তহবিল বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। রোববার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিক্ষোভ করে। অবশেষে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো কি?
শিক্ষার্থীরা মূলত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাদের দাবির মধ্যে অন্যতম হলো:
- টিউশন ফি কমানো: সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি কোর্সের ফি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা অবিলম্বে এই ফি হ্রাসের দাবি জানিয়েছে।
- গবেষণা তহবিল বৃদ্ধি: গবেষণা খাতের তহবিল কমানো শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গবেষণার সুযোগ সীমিত করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দের দাবি জানায়, যা তাদের একাডেমিক উৎকর্ষতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- নতুন উপাচার্য নিয়োগ: শিক্ষার্থীরা নিরপেক্ষ এবং দক্ষ একজন উপাচার্যের নিয়োগের দাবি তুলেছে, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ও নেতৃত্বে উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হবেন।
- ইন্টার্নশিপ খরচ শূন্য করা: ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই খাতের খরচ তাদের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করছে। শিক্ষার্থীরা চায়, এই খরচ পুরোপুরি শূন্য করা হোক।
- পরিবহন সুবিধা: শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর দাবি, বর্তমান পরিবহন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত, এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, আইইউবি বিভিন্ন কোর্সের ফি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পাশাপাশি গবেষণা তহবিল কমিয়ে দিয়েছে, যা তাদের একাডেমিক উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা অভিযোগ করেছে যে, শিক্ষকদের পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং নতুন শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে বর্তমান শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ তৈরি করা হচ্ছে।
একজন শিক্ষকের ভাষ্য অনুযায়ী, “নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিলে খরচ বাড়বে এই অজুহাতে আমাদের ওপর অযৌক্তিক ওয়ার্কলোড চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে শিক্ষার মান হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে শিক্ষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আশা প্রকাশ করেছে যে, শিগগিরই একটি সমাধান পাওয়া যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি
যদিও শিক্ষার্থীরা বর্তমানে আন্দোলন স্থগিত করেছে, তবে তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তাদের দাবিগুলো পূরণ না হলে ভবিষ্যতে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। শিক্ষার্থীরা বলছে, “আমাদের দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানতে বাধ্য, কারণ এগুলো আমাদের একাডেমিক ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।”
আইইউবির শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যেখানে তারা নিজেদের অধিকার ও সুযোগগুলোর জন্য সোচ্চার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের সংলাপের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হলে শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক কর্মকাণ্ডে আরও মনোযোগী হতে পারবে।