খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষকদল মাটি ছাড়া চাষাবাদের মাধ্যমে গৃহপালিত পশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত এই ঘাসকে ‘হাইড্রোপনিক ফডার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যা সাধারণ ঘাসের তুলনায় অধিক পুষ্টিকর।
গবেষণা প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী কেন্দ্রের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে এক কর্মশালার মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাস প্রাণিসম্পদের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
বাংলাদেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রাণিসম্পদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাইড্রোপনিক ফডার উৎপাদনের ফলে গৃহপালিত পশুর জন্য অধিক পুষ্টির উপাদান নিশ্চিত করা সম্ভব। সাধারণ ঘাসের তুলনায় হাইড্রোপনিক ফডারে অধিক ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে, যা প্রাণীদের কাছে সুস্বাদু এবং সহজে হজমযোগ্য।
গবেষকদল জানায়, হাইড্রোপনিক ফডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো এর ব্যবহারযোগ্যতা প্রতিকূল পরিবেশে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও দুর্যোগ-প্রবণ দেশ, যেখানে কৃষি জমি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অল্প জায়গায় প্রাণী খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব।
অধ্যাপক সরদার শফিকুল ইসলাম বলেন, “হাইড্রোপনিক ফডারের উপাদানগুলো অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন এনজাইমের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে, যা ভিটামিনের শোষণ ও জৈব উপলভ্যতা বৃদ্ধি করে।”
গবেষণায় পাঁচ প্রজাতির বীজ ব্যবহার করে আবহাওয়ার উপযোগিতা, ফলন, পুষ্টিগত উপাদান এবং উৎপাদনের খরচ সম্পর্কে বিশদ তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মো. মোসতাযাবুর রহমান জানান, খরচের দিক থেকে গমের হাইড্রোপনিক ফডারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে ফলনের ক্ষেত্রে যব ও বরবটি অধিক সফলতা দেখিয়েছে।
এই গবেষণা বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।