হিজবুল্লাহর দীর্ঘসময় ধরে নেতৃত্ব দেওয়া হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে ইসরায়েল, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের শঙ্কা তৈরি করেছে। লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে পুরো অঞ্চল জুড়ে নতুন সংঘর্ষের সূত্রপাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে। বিশেষ করে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। এ যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ক্রমাগত ধাক্কা খাচ্ছে। একাধিক শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর পাশাপাশি তাদের সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং স্থাপনাগুলোও ইসরায়েলের বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি অভিযানের ফলে হিজবুল্লাহর অবস্থান ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবুও, হিজবুল্লাহ এই যুদ্ধে হাল ছাড়ার মতো কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মাদ আল বাশা বলেন, হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পর হিজবুল্লাহ তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে। তবে তারা কখনোই ইসরায়েলের সামনে আত্মসমর্পণ করবে না। তাদের হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে, যাদের সিরিয়ায় যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা প্রতিশোধ নেবে।
ইরান, হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক, ইতোমধ্যেই ৫ দিনের শোক ঘোষণা করেছে এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ি এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও অতীতে ইরান কখনোই এমন পরিস্থিতিতে তৎক্ষণাৎ প্রতিশোধ নেয়নি, তবে এবার তারা কতটা ধৈর্য ধরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরানের বিভিন্ন প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী, যেমন হুতি বিদ্রোহী এবং সিরিয়া ও ইরাকের আরও কয়েকটি গোষ্ঠী, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনাগুলোর উপর হামলা চালাতে পারে।
ইরান এবং ইসরায়েলের সংঘাতের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কারণ এই হত্যাকাণ্ড ইরানের জন্য একটি বড় ধাক্কা। ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর প্রতিশোধমূলক হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত না থাকে, তবে সংঘাত আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করতে পারে। ইরান ও হিজবুল্লাহর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ইসরায়েলের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে, তেল আবিব এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে হামলা হলে, ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হতে পারে।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হলেও, লেবাননে স্থল অভিযান চালানো ইসরায়েলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। স্থল যুদ্ধে হিজবুল্লাহ তাদের প্রতিরোধ শক্তি আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে। যেমনটা গাজায় হয়েছিল, যেখানে ইসরায়েল নিজেই ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল।
ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের চলমান সংঘাতের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের ১২টি জোট ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে ইসরায়েল সেই প্রস্তাব উপেক্ষা করে লেবাননে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কীভাবে তারা লেবাননে স্থল অভিযান না চালিয়ে এই সংঘাতে তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে।
যদি ইসরায়েল স্থল অভিযান চালায়, তাহলে গাজায় যেমন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল, তেমনই লেবাননেও প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে পারে। এতে করে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক সংঘাতের সূত্রপাত হতে পারে, যা ইরান, হিজবুল্লাহ, এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি করবে।
হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক নতুন সংকট তৈরি করেছে। ইরান, হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েল এই পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি স্পষ্ট যে, এ ঘটনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র লেবানন এবং ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর বিস্তৃতি পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।