চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝরনায় সাময়িকভাবে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর বন-বিভাগের অধীনে থাকা ঝরনাটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান সংস্কার কাজের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বন-বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও ঝরনাটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে খৈয়াছড়া ঝরনার ওপর থেকে পাথর পড়ে এক ব্যাংক কর্মকর্তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। এই দুর্ঘটনার পর থেকেই ঝরনায় পর্যটকদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। চট্টগ্রাম উত্তর বন-বিভাগের বারৈয়াঢালা রেঞ্জের কর্মকর্তা আশরাফুল আলম নিশ্চিত করেছেন যে, এই দুর্ঘটনা এবং চলমান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঝরনায় পর্যটকদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তাই বন-বিভাগ ঝরনায় সাময়িকভাবে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে এবং সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বারৈয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, “সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পর্যটকরা খৈয়াছড়া ঝরনায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে পর্যটকদের জন্য বিকল্প ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্কের অন্যান্য ঝরনা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আমরা পর্যটকদেরকে সেগুলোতে ভ্রমণের পরামর্শ দিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান যে, ঝরনায় ভ্রমণের সময় বন-বিভাগের কর্মচারী বা ট্যুরিস্ট গাইডের সহযোগিতা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ভ্রমণের সময় সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই নির্দেশনা অনুসরণ করা হলে ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পাবে।
এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে পর্যটকদের ঝরনায় ভ্রমণের পরিকল্পনায় সাময়িক ব্যাঘাত ঘটলেও বন-বিভাগ আশা করছে, পর্যটকরা পরিস্থিতি বুঝে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা সামঞ্জস্য করবেন। মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা সবসময়ই দেশের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জলপ্রপাতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং পরিবেশগত বৈচিত্র্যের কারণে পর্যটকদের কাছে এই ঝরনা অত্যন্ত জনপ্রিয়।
খৈয়াছড়া ঝরনা চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত এবং এটি দেশের অন্যতম বৃহত্তম জলপ্রপাত। ঝরনার নয়টি ধাপ এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশ প্রকৃতি প্রেমীদের আকৃষ্ট করে থাকে। এর শান্ত পরিবেশ, গাছ-গাছালি ঘেরা পরিবেশ এবং ঝরনার অবিরাম জলধারা একে দেশের সেরা পর্যটন স্থানগুলোর একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
পর্যটকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাদের জন্য। বন-বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, পর্যটকদের সর্বদা সুরক্ষা উপকরণ সঙ্গে রাখা উচিত। বিশেষ করে ঝরনার মতো জায়গায় যেখানে পাথর পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, সেখানে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। এছাড়া, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে ভ্রমণের পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি।
বন-বিভাগ জানিয়েছে যে, ঝরনার পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে এবং পর্যটকদের জন্য আরও নিরাপদ করে তুলতে তারা সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে। ঝরনার ধাপগুলোতে সঠিক নির্দেশনা এবং সতর্কতামূলক চিহ্ন বসানো হবে যাতে পর্যটকরা সচেতন থাকেন। এছাড়া, ঝরনার প্রবেশ পথ এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ করা হবে, যাতে যেকোনো দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
খৈয়াছড়া ঝরনার সংস্কার কাজ শেষে এটি পুনরায় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তবে তার আগে ঝরনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বন-বিভাগের পক্ষ থেকে আরও কিছু অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পর্যটকরা যাতে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যেই কাজ চলছে।
খৈয়াছড়া ঝরনা ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান হলেও সাময়িকভাবে নিরাপত্তার কারণে এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। বন-বিভাগ আশা করছে, পর্যটকরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা সমন্বয় করবেন এবং পরবর্তীতে ঝরনাটি যখন পুনরায় উন্মুক্ত হবে, তখন আরও নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশে তা উপভোগ করতে পারবেন।