নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় দিবস উদযাপনে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিগত ১৫ বছরের সময়কালে চালু হওয়া কয়েকটি জাতীয় দিবস পালনের বাধ্যবাধকতা বাতিল কিংবা তা পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। বিশেষত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্ম ও মৃত্যু দিবসগুলোর রাষ্ট্রীয় উদযাপনে এই পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে সরকারিভাবে পালিতব্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে মোট ৯১টি দিবস রয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে ৮৪টি এবং বাকি সাতটি দিবস আরবি ও বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পালিত হবে। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশেষ কিছু দিবস পালনের বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে চায়। মুজিব পরিবারকেন্দ্রিক দিবসগুলোর উপরেও পরিবর্তন আসতে পারে।
শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকেন্দ্রিক জাতীয় দিবসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস, ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস (বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন), ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। এসব দিবসের মধ্যে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারিভাবে ছুটি পালন করা হতো। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই এই ছুটির বাধ্যবাধকতা বাতিল করেছে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্তটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে গৃহীত হয়। বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শক্রমে এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে দিবসটি উদযাপনে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা না হলেও ছুটি বাতিলের বিষয়টি নতুন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে আলোচনায় এসেছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে, ১৫ আগস্ট ছাড়াও মুজিব পরিবারকেন্দ্রিক অন্যান্য দিবসগুলোর উদযাপনেও পরিবর্তনের পরিকল্পনা চলছে। তবে এসব দিবস একসঙ্গে বাতিল করা হবে না। প্রতিটি দিবস যখন সামনে আসবে, তখনই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দিবসগুলো পালন করা হবে কি না, তা নিয়ে তখন আলোচনা হবে।
২০২৪ সালে মোট ৯১টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সরকারিভাবে পালনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিবস হলো—জাতীয় যুব দিবস (১ নভেম্বর), জাতীয় সংবিধান দিবস (৪ নভেম্বর), বিশ্ব এইডস দিবস (১ ডিসেম্বর), স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস (১২ ডিসেম্বর), এবং বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর)। এছাড়াও, বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১ বৈশাখ বাংলা নববর্ষ, ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রজয়ন্তী এবং ১১ জ্যৈষ্ঠ নজরুলজয়ন্তী পালিত হবে।
আরবি ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে পালিত হবে—ঈদুল ফিতর (১ শাওয়াল), ঈদুল আজহা (১০ জিলহজ), এবং ঈদে মিলাদুন্নবী (১২ রবিউল আওয়াল)। তবে মুজিব পরিবারকেন্দ্রিক দিবসগুলোর ক্ষেত্রে আগামীতে কী পরিবর্তন আসবে, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাতীয় দিবস উদযাপনে পরিবর্তনের বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত আসন্ন দিনগুলোতে নেওয়া হবে।
জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল এবং মুজিব পরিবারের বিভিন্ন দিবস উদযাপন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা দেশব্যাপী আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও মৃত্যুদিবসের মতো দিবসগুলোর রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। সরকারিভাবে এসব দিন উদযাপন বন্ধ করার চিন্তাভাবনাকে অনেকেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ভবিষ্যৎ ঐতিহাসিক মূল্যায়নে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলেও চলছে আলোচনা।
সাবেক সরকারের সময় প্রবর্তিত ৮৪টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালনের পরিকল্পনা থাকলেও নতুন সরকার তা পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে সাধারণ ছুটির ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আসবে এবং কোন দিবসগুলো উদযাপন করা হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল রয়েছে।
এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, তিনি এখন পর্যন্ত কোনও নির্দেশনা পাননি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানকেও এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতীয় দিবস পালনের ক্ষেত্রে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসলেও যখন যে দিবস সামনে আসবে, তখনই তার উদযাপন বা বাতিলের বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেক