কানপুরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম সেশনে ভালো লড়াই করেছে বাংলাদেশ দল। ৭৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে সেশন শেষ করে টাইগাররা। কিন্তু এদিন মাঠে বাংলাদেশ দলের খেলা ছাড়াও আলোচনার কেন্দ্রে ছিল একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা—সমর্থক টাইগার রবি ভারতীয় দর্শকদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, যা বাংলাদেশি সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
রবি, যিনি ‘টাইগার রবি’ নামে পরিচিত, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম বড় সমর্থক। বাংলাদেশের প্রায় সব আন্তর্জাতিক সিরিজ ও টুর্নামেন্টে তাকে টাইগারের সাজে গ্যালারিতে দেখা যায়। তার এই সমর্থন শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের কাছেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিত। তিনি কেবল দেশের ভেতরেই নয়, বিদেশের মাটিতেও দলের সমর্থনে সর্বদা উপস্থিত থাকেন। তার এই নিবেদিতপ্রাণ সমর্থন তাকে বাংলাদেশি ক্রিকেটের সমর্থক মহলে অত্যন্ত প্রিয় করে তুলেছে।
২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, কানপুরে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন চলছিল। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময়, মাঠে বৃষ্টি শুরু হলে রবি গ্যালারির ভিতরে আশ্রয় নেন। এসময় ভারতীয় সমর্থকদের একটি দলের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে কথাবার্তা হাতাহাতিতে গড়ায় এবং রবি আহত হন। গ্যালারিতে উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত তাকে সেখান থেকে সরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান।
রবির পাঁজরের নিচের দিকে আঘাত লাগে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশের সহযোগিতায় তিনি নিরাপদে হাসপাতালে পৌঁছান। আহত অবস্থায় রবি স্থানীয় পুলিশকে জানান, তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং আঘাতের কারণে তিনি বেশ কষ্টে আছেন।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচ সবসময়ই অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। মাঠের খেলায় যেমন উত্তেজনা থাকে, তেমনি গ্যালারিতেও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে কথার লড়াই কখনও কখনও সংঘর্ষে পরিণত হয়, যা মাঠের বাইরের পরিবেশকে আরো উত্তপ্ত করে তোলে।
রবির ওপর হামলার ঘটনাটি এমন একটি উদাহরণ যা এই উত্তেজনাকর সম্পর্কের একটি অংশ। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলোকে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে এবং গ্যালারিতে সমর্থকদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে আসা সমর্থকদের মধ্যে রবি সবচেয়ে পরিচিত নাম। তিনি লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশ দলের সব সিরিজে মাঠে উপস্থিত থাকেন এবং সমর্থকদের মাঝে গর্জন তোলেন। টাইগার সেজে গ্যালারিতে তার উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা সবাইকে মুগ্ধ করে। এই ধরনের সমর্থকরা দলকে মাঠে এবং মাঠের বাইরে উজ্জীবিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রবির মতো সমর্থকরা কেবল মাঠেই উল্লাস করেন না, তারা সোশ্যাল মিডিয়াতেও দলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেন। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তিনি দলের জয়-পরাজয়ের সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পাশে থাকেন, যা দল ও সমর্থকদের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে।
রবির ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশি সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা এই ঘটনাকে নিন্দা জানিয়েছেন এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশি সমর্থকরা রবির দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা খেলাধুলার মূল অংশ এবং তাদের উপস্থিতি ম্যাচকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। গ্যালারিতে যে সমর্থকেরা দলের জন্য প্রাণপণ করে সমর্থন জানায়, তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব মাঠ কর্তৃপক্ষেরও রয়েছে।
এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলিতে সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের মতো উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচগুলোতে গ্যালারিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এড়ানো যায়।
এর পাশাপাশি, সমর্থকদের মধ্যেও সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। ক্রিকেট খেলাটির মূল সৌন্দর্য হচ্ছে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সম্মানবোধ ও সৌহার্দ্য। মাঠের খেলায় যেমন প্রতিযোগিতা থাকে, তেমনি গ্যালারিতেও থাকা উচিত উদারতা ও সহনশীলতা।
বাংলাদেশের টাইগার রবি শুধু একজন সাধারণ সমর্থক নন, তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল প্রতীক। তার মতো নিবেদিতপ্রাণ সমর্থকের ওপর হামলা কেবল একটি ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং এটি সমর্থকদের ওপর একটি আঘাত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষকে সমর্থকদের নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে আরও সতর্ক হতে হবে। আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।