চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২৬: চট্টগ্রাম কলেজে বৃহস্পতিবার দুপুর ও বিকালে দুই দফায় সংঘটিত হামলায় ছাত্রদলের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন ছুরিকাহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগের শিবির সমর্থিত নেতাকর্মীদের এই হামলার ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে কলেজ ক্যাম্পাস ও এর আশেপাশে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এবং বিকালে ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে হামলার এই ঘটনা ঘটে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হামলার আগে তারা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে শিবিরের অত্যাচারের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার পরপরই শিবিরের কর্মীরা তাদের ঘিরে ফেলে এবং পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের বাইরে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়।
আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে
ছাত্রদলের সিনিয়র সদস্য মঞ্জুরুল আলম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে যুগান্তরকে জানান, তারা অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ দেওয়ার পর শিবিরের কর্মীরা তাদের ধাওয়া করে এবং কলেজ গেটের সামনে আটকিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। পরে কলেজের প্রধান গেট বন্ধ করে দিয়ে তাদের শাসানো হয় যাতে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। এরপর তারা ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময়, শিবির কর্মীরা তাদের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়।
এই হামলায় কমপক্ষে ১০ জন ছাত্রদল নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং কয়েকজনকে ছুরিকাহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঞ্জুরুল আলম জানান, এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
হামলার কারণ ও প্রেক্ষাপট
হামলার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে মঞ্জুরুল আরও বলেন, কিছুদিন আগে শিবির কর্মীরা ছাত্রদল কর্মী খোরশেদ আলমকে মারধর করে। সেই ঘটনার পর ছাত্রদল অধ্যক্ষকে একটি স্মারকলিপি দেয়। স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন আশরাফ নামে একজন ছাত্রদল কর্মী, যাকে শিবির কর্মীরা দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে আটক করে গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়।
এ খবর জানার পর ছাত্রদল নেতারা অধ্যক্ষকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন। অধ্যক্ষ তাদেরকে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেন, এবং অভিযোগ জমা দেওয়ার পরপরই শিবিরের পক্ষ থেকে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি অস্বীকার
চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সমন্বয়ক শিবির সমর্থিত হামিম আবদুল্লাহ দাবি করেছেন, কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মারামারি বা হামলার ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, “সকালে ছাত্রদলের একজন নেতাকে কিছু সাধারণ ছাত্র নাজেহাল করেছিল। বিষয়টি জানানো হলে অধ্যক্ষ তাদের অভিযোগ দিতে বলেন, কিন্তু তারা অভিযোগ দেয়নি। পরে দেব পাহাড় এলাকায় কিছু বহিরাগতকে সাধারণ ছাত্ররা প্রতিরোধ করে।”
থানার বক্তব্য
চকবাজার থানার ওসি জাহেদুল কবির জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে তারা শুনেছেন, তবে রাত ৮টা পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ জমা দেয়নি।
উত্তেজনা বিরাজ করছে চট্টগ্রাম কলেজে
রাজনৈতিকভাবে চট্টগ্রাম কলেজে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শিবির চট্টগ্রাম কলেজ দখল করলেও তারা ছাত্রদলকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। ছাত্রদল আরও দাবি করেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ ওয়াসিম ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
সুরাহা দাবি ছাত্রদলের
ছাত্রদল নেতারা শিবিরের হামলা থেকে রক্ষা পেতে এবং ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও কর্মসূচি পালনের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা এই হামলার যথাযথ বিচার দাবি করছেন এবং শিবিরের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম কলেজে সংঘটিত এই সহিংস ঘটনা চট্টগ্রাম শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সহিংসতার একটি নমুনা। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দাবি করছেন, যেখানে তারা নির্ভয়ে তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা করতে পারবেন।