ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সেবায় জনগণের হয়রানি এবং সেবা প্রদান সম্পর্কিত নানা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিআরটিএ কর্তৃক আয়োজিত একটি গণশুনানিতে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা ২০২৪-২৫ এর প্রথম প্রান্তিকের অংশ হিসেবে বিআরটিএ এই গণশুনানির আয়োজন করে, যেখানে সেবা প্রত্যাশীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা উত্থাপন করেন। এই শুনানিতে বিআরটিএ’র সেবা ব্যবস্থাপনা, হয়রানি, এবং সেবার মান নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীরা।
গণশুনানিতে সেবা প্রত্যাশীরা বিআরটিএ’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল জানান, “আমরা জানি, অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। আমরা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে, যারা সমস্ত অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”
চেয়ারম্যান আরও জানান, “বিআরটিএ’র প্রধান অফিস থেকে এই কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এবং আমরা সেবা প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর ও গ্রাহকবান্ধব করতে কাজ করছি।”
গণশুনানিতে উপস্থিত সেবা প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে জটিলতার কথা উল্লেখ করেন। বিশেষ করে লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা এবং প্রিন্টিং নিয়ে সমস্যার কথা বলা হয়। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, “লাইসেন্সের ক্ষেত্রে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন, আমি তা জানি। তবে আমরা দ্রুত এর সমাধান করবো। লাইসেন্স প্রিন্টিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কাজ সঠিকভাবে না করলে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। আপনারা ধৈর্য ধরুন, আমরা দ্রুত সমাধানের দিকে যাচ্ছি।”
গণশুনানিতে বিআরটিএ’র নানা সেবা নিয়ে সেবা প্রত্যাশীরা ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা জানান, লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় দেরি, হয়রানি, এবং দুর্নীতির কারণে সেবা প্রাপ্তিতে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগও উঠে আসে। এ ছাড়া বিভিন্ন সেবা কেন্দ্রগুলোতে সেবার মান উন্নত করতে কর্মকর্তাদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল এ বিষয়ে বলেন, “আমরা জনগণের প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো সেবার মানোন্নয়ন এবং জনগণের হয়রানি কমানো। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমরা সেবা প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও কার্যকর করার চেষ্টা করছি।”
গণশুনানিতে সরাসরি উপস্থিত থাকা ব্যক্তিরা বিআরটিএ’র বিভিন্ন সেবা, যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ি নিবন্ধন, এবং অন্যান্য সেবা নিয়ে সরাসরি অভিযোগ করেন। বিআরটিএ’র সেবাদান প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের সেবাপ্রাপ্তি আরও দ্রুত ও সহজ করার প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়।
গণশুনানিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) সংস্থাপন ও টিএ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ কামরুল হাসান, বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. হেমায়েত উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিফা নুসরাত, এবং ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) কাজী মো. মোরছালীনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
গণশুনানিতে কর্মকর্তারা সেবার মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, জনগণের অভিযোগের ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল সেবা প্রত্যাশীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা সবার অভিযোগ শুনেছি, এবং তা সমাধানের জন্য কাজ করছি। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমরা একটি উন্নত সেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের লক্ষ্য হলো বিআরটিএ’র সেবাকে জনগণের কাছে আরও সহজলভ্য ও হয়রানিমুক্ত করা। আমরা ইতিমধ্যেই সেবার মানোন্নয়নে কাজ শুরু করেছি, এবং আমরা আশা করছি যে অল্প সময়ের মধ্যে জনগণ এর ফলাফল দেখতে পাবেন।”