ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪: আজ জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে বৃষ্টি থাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রেসক্লাবে জানাজার পর, ডিআরইউতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিএফইউজে, ডিইউজে এবং প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ অনেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
জানাজার আগে আয়োজিত সমাবেশে রুহুল আমিন গাজীর সহকর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। কবি আব্দুল হাই সিকদার বলেন, “রুহুল আমিন গাজী সাহেব অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “রুহুল আমিন গাজী একজন সাহসী সাংবাদিক। তিনি দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন, কিন্তু দেশের মানুষের পক্ষে সবসময় কথা বলেছেন। জাতি তাকে সারা জীবন মনে রাখবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “ভালো মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মহান রাব্বুল আলামিন রুহুল আমিন গাজী ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, “রুহুল আমিন গাজী দেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক ছিলেন। তিনি সবসময় দেশের পক্ষে কথা বলতেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। তিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামের একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন।”
রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আবেগঘন কণ্ঠে জানাজা শেষে বলেন, “আমার বাবা সবসময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করতেন এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতেন। আমি গতকাল বাবাকে দেখে অনেক কষ্ট পেয়েছি, আর কোনোদিন আমার বাবা আমাকে ডাকবেন না। আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা আমার বাবাকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।”
ডিআরইউতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউয়ের সভাপতি শুক্কর আলী শুভ, সাধারণ সম্পাদক মহী উদ্দিনসহ সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতারা। এ সময় সাংবাদিক সমাজের সদস্যরা তাদের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও নেতা রুহুল আমিন গাজীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা বলেন, রুহুল আমিন গাজী ছিলেন সাংবাদিকদের জন্য একজন মহান অভিভাবক এবং দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে একজন সাহসী নেতা।
রুহুল আমিন গাজী ছিলেন দেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতার জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। রুহুল আমিন গাজী বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তার মতামত প্রকাশ করতেন। তার এই অঙ্গীকার তাকে কারাবাসের সম্মুখীন করলেও তিনি সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করে গেছেন।
রুহুল আমিন গাজী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় অগ্রগামী ছিলেন। তার সাহসী ও নির্ভীক সাংবাদিকতা তাকে দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিকদের কাতারে নিয়ে এসেছে। তিনি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্যও লড়াই করেছেন। রুহুল আমিন গাজী সাংবাদিকতা পেশায় ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশের মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন।
রুহুল আমিন গাজীর পেশাগত জীবন ছিল সংগ্রামী। তিনি সবসময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। তার এই সংগ্রামের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে কারাবরণ করেছেন, কিন্তু কখনোই তার অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসেননি।
রুহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার সহকর্মীরা তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আমাদের জন্য তিনি ছিলেন একজন আদর্শ সাংবাদিক, যিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবসময় সত্যের পক্ষে কথা বলেছেন। তার মতো সাহসী সাংবাদিক পাওয়া কঠিন।”
রুহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিকতা অঙ্গনে একটি বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তিনি সাংবাদিকতার জগতে একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশের মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন। তার সাহসী ও নির্ভীক নেতৃত্ব এবং তার অবদান দেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।